দশ মাসে বিপিসির মুনাফা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা
কোনো কোনো জ্বালানি তেলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ৩৫ টাকারও বেশি মুনাফা করছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করে বছর হতে চলল। এখনো জ্বালানি তেলের দাম কম। তারপরেও সরকার এখনো জ্বালানি তেলের দাম কমানো বা সমন্বয় না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জ্বালানি তেলের মূল্য কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসের কারণে ২০১৫ সালে উন্নত দেশসমূহ এবং অধিকাংশ বিকাশমান ও উন্নয়নশীল দেশে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে। এই সুযোগে জ্বালানি খাতের নানা ভর্তুকি ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বিধান হবে আমাদের অন্যতম প্রচেষ্টা।’
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও দেশীয় বাজারে এখনো কমানো হয়নি কেন—বাজেটের পরদিন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন অর্থমন্ত্রীকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনো সমন্বয় করা হয়নি। আসলে জ্বালানি খাতে গত ৩০-৪০ বছরে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অর্থায়নটা স্বচ্ছ নয়। চিন্তা করছি কীভাবে যৌক্তিক করা যায়।’ তবে এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের একটা মাত্রা সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বিপিসির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গত এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক দেখিয়েছে যে সংস্থাটি বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলে কী পরিমাণ মুনাফা করছে। তাতে দেখা গেছে, প্রতি লিটার অকটেন (এইচওবিসি) উৎপাদনে বিপিসির যেখানে খরচ ৬৩ টাকা ৫১ পয়সা, সংস্থাটি তা বিক্রি করছে ৯৯ টাকায়। অর্থাৎ এক লিটার অকটেন বিক্রি করে বিপিসির মুনাফা ৩৫ টাকা ৪৯ পয়সা।
একইভাবে ৫৪ টাকা ২৩ পয়সার কেরোসিন (এসকেও) ৬৮ টাকায় বিক্রি করে মুনাফা করছে ১৩ টাকা ৭৭ পয়সা, ৫৪ টাকা ২৫ পয়সার জেট ওয়েল ৭৩ টাকায় বিক্রি করে ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা, ৫৩ টাকা ৩২ পয়সার ডিজেল (এইচএসডি) ৬৮ টাকায় বিক্রি করে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা এবং ৪০ টাকা ৪৩ পয়সার ফার্নেস ওয়েল (এইচএসএফও) ৬০ টাকায় বিক্রি করে ১৯ টাকা মুনাফা হচ্ছে বিপিসির।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৫ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রায় ১০ মাসে (২২ এপ্রিল পর্যন্ত) বিপিসি ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়াকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন অর্থমন্ত্রী।
কারণ, এর আগের টানা পাঁচটি অর্থবছর লোকসান দিয়েছে বিপিসি। এর মধ্যে সংস্থাটির সবচেয়ে কম লোকসান হয়েছে ২০০৯-১০ অর্থবছরে, তা-ও ২ হাজার ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে ২০১১-১২ অর্থবছরে—১১ হাজার ৩৭১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিপিসিকে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। অথচ, ঠিক আগের অর্থবছরেই সংস্থাটিকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।