১৪ সেকেন্ডে বিপর্যয়

মাত্র ১৪ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল। সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণে সেদিন প্রথমে ভেড়ামারা আন্তঃদেশীয় সাবস্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে দেখা দেয় আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি বা বিদ্যুৎ প্রবাহে সমস্যা। এতে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বড় ধরণের পার্থক্য তৈরি হয়। এই পার্থক্যের কারণে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই ১লা নভেম্বর জাতীয় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল।
তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে। বুধবার বিদ্যুৎ ভবনে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যতে এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় নিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এসময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসাইন, পিজিসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনীসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত কমিটি বিভিন্ন বিষয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেছে।
সফটওয়ার সমস্যা বা ত্রুটির কারণে ভেড়ামারা সাবস্টেশনটি বন্ধ হয়েছিল বলে পিজিসিবি জানিয়েছে। সাবস্টেশন স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান সিমেন্স প্রতিনিধিকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য দেশে আসতে বলা হয়েছে। দ্রুত সময়ে তারা বাংলাদেশে এসে এবিষয় পর্যালোচনা করবে। ভেড়ামারা সাবস্টেশনের ওয়ারেন্টি সময় শেষ হওয়ার আগেই সফটওয়্যার সমস্যা দেখা দিল। ঘটনার দিন সাবস্টেশনটি আটবার বন্ধ হয়েছিল। একসপ্তাহ পরে ৭ নভেম্বর আবার বন্ধ হয়ে যায়।
কমিটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিক করার জন্য কমিটির করা সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী সপ্তাহে পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার কাজ শুরু হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, আমাদের গ্রিড এখনও ঝুঁকি মুক্ত নয়। ঝুঁকি নিয়েই চলতে হবে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এখন উৎপাদনের সাথে সাথে সঞ্চালন ব্যবস্থাতেও মনোযোগ দেয়া হবে।
সেদিন যা ঘটেছিল
চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেড়ামারা হাইভোল্টেজ ট্রান্সফরমার ১লা নভেম্বর বেলা ১১টা ২৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৪ সেকেন্ড দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। ১৪ সেকেন্ড পরে পর্যায়ক্রমে সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপর্যয় ঘটে। প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে মাত্র ৫ মিলি সেকেন্ডে বন্ধ হয়ে যায়।
সুপারিশ
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পর্যায়ক্রমে দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা, কারিগরি সব ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিক করার পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে স্বল্প মেয়াদে সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলের উন্নয়ন করা, জেনারেশন ইউনিট এবং ফিডারের ফ্রিকোয়েন্সি রিলের মধ্যে সমন্বয় করা, আগের গ্রিড বিপর্যয়ের পর করা সুপারিশ বাস্তবায়ন, এনএলডিসির সফটঅ্যায়ার প্রতি পাঁচ বছর পর পর আধুনিকায়ন করা, প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক মিলি সেকেন্ডে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রেখে সফটওয়্যারের ব্যবস্থা করা, এনএলডিসিতে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা, জিপিএস সময়ের ব্যবস্থা করা, প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আধুনিক রেকডিং প্রথা চালু করা, প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে খুচরা যন্ত্রাংশ প্রস্তুত রাখা, এলাকা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাগ করার ব্যবস্থা রাখা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা চালু রাখতে নিজস্ব জেনারেটর রাখার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এখন অনেক সময় ফোনে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সময় চলে যায়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।