অদক্ষ ও ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের প্রস্তাব সিপিডির 

ঢাকা: ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অদক্ষ ও ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালের মধ্যে বন্ধের প্রস্তাব করেছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে বুধবার সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ: একটি নাগরিক ইশতেহার’ শীর্ষক সেমিনারে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

দেশের উপকূলীয় এলাকায় জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্প বাতিল করে সেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবও দেন তিনি।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানি রূপান্তরের ক্ষেত্রে সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো উচিৎ। এজন্য ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে সরকার কিছু কিছু উদ্যোগ নিতে পারে।

জ্বালানির চাহিদা পূর্বাভাস সংশোধন করা, স্থানীয় মুদ্রায় জ্বালানির মূল্য পরিশোধ, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান, সৌর সামগ্রীতে শুল্ক কমানো, বায়োগ্যাসের ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।

বিদ্যুতের দায়মুক্তি আইন বাতিলের ও প্রস্তাব দেয়া হয়।

সেমিনারে বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মহাপরিকল্পনায় ২০৫০ সাল নাগাদ ১৭৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার বড় অংশই ব্যয় হবে এলএনজিভিত্তিক অবকাঠামো নির্মাণে। কিছুটা বিনিয়োগ হবে পরিবহন খাতে। জ্বালানি রূপান্তরের দিক থেকে বিবেচনা করলে সরকারের এসব নীতিমালায় আরো পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয়। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি এখন অন্ন-বস্ত্রের মতো প্রধান বিষয় হয়ে গেছে। দিন শেষে রাজনীতিবিদদের কাছে জনগণের চাওয়াটাই মুখ্য। আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, তখন বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকটা যুদ্ধাবস্থার মতো ছিল। এলাকায় গেলেই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতো বিদ্যুতের দাবিতে। এখন একজনও আর আসে না। কিছু ভুল থাকতে পারে। তখন এটি দরকার ছিল। কারণ জনগণ চায় বিদ্যুৎ। আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেই যেতে হবে। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, প্রথমেই আমাদের পরিষ্কার হতে হবে আমরা আসলে কী করতে চাই। কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমাদের স্বল্পমেয়াদি চাহিদার প্রাক্কলন হওয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদে কী হবে সেটি এখন জরুরি না।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দিচ্ছে না এমনটি নয়। এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে একেবারে বের হয়ে যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি হওয়ার সুযোগ নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই অন্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম, বিইআরসির সাবেক সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবুল কালাম আজাদ, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) লিড এনার্জি অ্যানালিস্ট শফিকুল আলম বক্তব্য রাখেন।