অনুন্নত মানের তেল সরবরাহের অভিযোগ

অনুন্নত মানের জ্বালানি তেল সরবরাহের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উত্পাদন কম হচ্ছে অভিযোগ করেছে রেন্টাল, কুইকরেন্টালসহ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর প্রতিনিধিরা।তারা বলছে, মানহীন এ তেলের কারণে বিদ্যুৎ উত্পাদন কম হওয়ার পাশাপাশি যন্ত্রাংশেরও ক্ষতি হচ্ছে।বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তেল বিতরণকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিপিসির বিরুদ্ধে কাদামাটি মেশানো তেল সরবরাহের অভিযোগ করে।তারা জানায়, খুলনায় নতুন ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে  এই অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করা হয়েছে।কোম্পানির অভিযোগকৃত চিঠিতে বলা হয়, গত ডিসেম্বর মাসে কমিশনিং হওয়া এ কেন্দ্রটিতে প্রায় ৩৫ টন তেল সরবরাহ করা হচ্ছিল।কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশীদুল আলম এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেয়।চিঠিতে তারা এই কাদা মেশানো তেল পরিবর্তন করে দেয়ার কথা বলে।বিদ্যুৎকেন্দ্রে  এই তেল ব্যবহার করা যাচ্ছে না এবং নতুন কেন্দ্রটি এই অপরিশোধিত তেলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে চিঠিতে আশংকা প্রকাশ করা হয়।কোম্পানিটি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উত্পাদন স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত এই তেল পরিবর্তন করে দেয়া উচিত বলে জানিয়েছে।চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানির দুইটি তেল মজুদাগার ওই অপরিশোধিত তেলে ভর্তি।বর্তমানে এই পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি (সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে তিন থেকে চার ঘন্টা এই কেন্দ্র চালানো হয়) চালাতে প্রতি মাসে ৬০ লাখ লিটার তেলের প্রয়োজন হয়।সেচের কারণে সে চাহিদা প্রায় ১০ লাখ লিটার বাড়বে।

নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির অভিযোগের পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে তাত্ক্ষনিকভাবে অতিরিক্ত সচিব মোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল সরবরাহের বিষয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে রেন্টাল-কুইক রেন্টালসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির মতো তেলের মান নিয়ে অভিযোগ করেছে বলে জানানো হয়।এতে উত্পাদন খরচ বাড়ছে বলে তেলের দাম কমিয়ে এসব কেন্দ্রে তেল সরবরাহেরও কথা আলোচনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, কোনো কোনো কোম্পানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে যে মান থাকার কথা সেই মান নেই বলে প্রশ্ন উঠিয়েছে।তারা বলতে চাইছে, সরবরাহকৃত তেল মানসম্পন্ন নয়।বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিতরণ সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, মানসম্মত নয় বলে দাম কমিয়ে বেশি তেল সরবরাহ করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও বাস্তবে তেলের দাম বাড়ানো কমানোর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হয় না।আমরা এমনিতেই বেশি দামে কিনি আর বিক্রি করি কম দামে।আর দাম বাড়ানোর বিষয়টি নির্ধারণ করে সরকার।

এদিকে জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিপিসি পরিশোধিত তেল আমদানি করলেও বিপিসির অধীনের বিতরণ সংস্থাগুলো এই অপরিশোধিত তেল সরবরাহের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।উন্নত তেল সরবরাহ না করার উত্পাদন কম হওয়ার পাশাপাশি উত্পাদন খরচও বাড়ছে।

অন্যদিকে এই অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ি তেল পাওয়া যাচ্ছে না এই যুক্তিতে সম্প্রতি বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেরাই তেল আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে।তারা নয় শতাংশ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে এই তেল আমদানি করতে চায়।তবে মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নি।

চলতি বছর গ্রীষ্ম ও সেচের সময় তেল দিয়ে দুই হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।আগামী জুন মাস পর্যন্ত ২৭৪ মিলিয়ন লিটার ডিজেল এবং এক হাজার ৬২ মিলিয়ন লিটার ফার্নেস ওয়েল তেল উত্পাদনে প্রয়োজন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছে।মোট ১ হাজার ৩৩৬ মিলিয়ন লিটার তেল প্রয়োজন হবে।এজন্য খরচ ধরা হয়েছে ৯০৬৮৮ মিলিয়ন টাকা।