অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ৯ মাসের সর্বোচ্চে
আন্তর্জাতিক বাজারে আবার বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে ডিজেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং চলতি সপ্তাহে রাশিয়া ও সৌদি আরব জ্বালানি তেলের সরবরাহ আরো কমানোর ঘোষণা দেয়ায় বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। শুক্রবার জ্বালানিটির দাম আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে নয় মাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। খবর রয়টার্স।
আইসিই ফিউচারস এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৭৩ সেন্ট বা দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৯০ ডলার ৬৫ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ৬৪ সেন্ট বা দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৮৭ ডলার ৫১ সেন্টে উন্নীত হয়েছে।
টানা ছয়দিন উভয় বাজার আদর্শের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এর মধ্যে ব্রেন্টের দাম গত বছরের ১৬ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। অন্যদিকে ডব্লিউটিআইয়ের দাম গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। এ সপ্তাহে উভয় বাজার আদর্শের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ব্রেন্টের দাম ৫ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৭ শতাংশ বেড়েছিল।
বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওয়ান্ডার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেন, ‘সরবরাহ-সংক্রান্ত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওপেক প্লাস আগামী শীত মৌসুম পর্যন্ত সরবরাহ নিম্নমুখী রাখবে এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ওপেকের সদস্যদেশ রাশিয়া ও সৌদি আরব কয়েক মাস ধরেই এককভাবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহে দেশ দুটি সরবরাহ কমানোর সময়সীমা আরো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বছরের শেষ পর্যন্ত সম্মিলিতভাবে দৈনিক ১৩ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমানো হবে।’
কমার্জব্যাংকের বিশ্লেষকরা এক নোটে জানান, দাম কমার আগ পর্যন্ত চলতি বছরের শেষেও উত্তোলন কমানোর নীতি থেকে সরে আসা সৌদি আরবের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।
জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানান, পরিশোধন কেন্দ্রগুলোয় রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য সেপ্টেম্বরে রাশিয়া ডিজেল রফতানি কমাবে। তবে বিষয়টি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির পরিমাণ বাড়াতে পারে।
এদিকে পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো শুক্রবার চীন সফরে গেছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। চীন বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল আমদানিকারক। আবার ওপেকের সদস্যদেশ ভেনিজুয়েলায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেলের মজুদ রয়েছে।
দাম বাড়লেও চীনের বাজারে এখনো চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি। কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনীতিতে ধীর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার কারণে চাহিদায় ভাটা পড়েছে। অর্থনীতিকে গতিশীল করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও সেগুলো কার্যকর কোনো ফল দিচ্ছে না।
এদিকে চলতি বছরের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস বাড়িয়েছে রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক। অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও আগামী বছরের চাহিদা নিয়ে আশাবাদী জোটটি। কারণ চীন ও ভারত অব্যাহত জ্বালানির ব্যবহার বাড়াচ্ছে।
মাসভিত্তিক এক প্রতিবেদনে ওপেক জানায়, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ২৪ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল করে বাড়তে পারে। আগামী বছর চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে দৈনিক ২২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে।
জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ার পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওপেকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জোটটির আগাম পদক্ষেপ এবং উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত বাজারে স্থিতি ফিরিয়েছে। আগামী বছর পর্যন্ত এ স্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকবে। ২০২৪ সালে চীনের অর্থনীতিতে গতি ফিরবে। ফলে লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি আসবে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। বিষয়টি জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করবে।
–
বণিক বার্তা