অবশেষে অনুমোদন পেলো সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প

আমদানি করা জ্বালানি তেল নিরাপদ ও স্বল্প ব্যয়ে খালাস করতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যা বাস্তবায়িত হবে চীনা ঋণে।

‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে তেল খালাসের স্টেশন তৈরি করা হবে।

সেখান থেকে সমুদ্রের তলদেশ ও উপকূলীয় এলাকার ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ওই জ্বালানি তেল সরাসরি চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে আসা হবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের একটি জাহাজ খালাস করতে প্রায় ১১দিন সময় লাগে। কারণ যেসব বড় জাহাজে করে তেল আসে তা কর্ণফুলী নদীতে প্রবেশ করতে পারে না। ওই জাহাজ গভীর সমুদ্রে রেখে লাইটারেজ ভেসেল নিয়ে বন্দরে আনা হয়। এতে ব্যয় ও সময় দুটোই অনেক বেশি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর মাত্র দুই দিনে একটি জাহাজ খালাস করা সম্ভব হবে।

তেল খালাসের জন্য যে দুটি পাইপলাইন স্থাপন করা হবে তার একটি দিয়ে পরিশোধিত তেল এবং অন্যটি দিয়ে অপরিশোধিত তেল রিফাইনারিতে আসা হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।

এরমধ্যে চায়না এক্সিম ব্যাংক ঋণ হিসেবে সরবরাহ করবে ৩ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা; সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ৯২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

বাকি প্রায় ১১২ কোটি টাকার আসবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিজস্ব তহবিল থেকে।

আ হ ম কামাল জানান, মঙ্গলবারের একনেক সভায় ওই প্রকল্পসহ সাত হাজার ২৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট দশ উন্নয়ন প্রকল্প অুনমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, আর বাকি ৬০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে জোগান দেবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবারের একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে কোনও প্রকল্পই নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। অনুমোদিত সবগুলোই জাতীয় প্রকল্প। নির্দিষ্ট কোনো পৌরসভা বা নির্বাচনী এলাকার নয়।

বাকি নয় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ের চট্টগ্রাম, মংলা, আইসিডি কমলাপুর এবং বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জন্য কন্টেইনার স্ক্যানার ক্রয় প্রকল্প।

১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘বাকেরগঞ্জ-পাদ্রীশিবপুর-কাঁঠালতলি-সুবিদখালী-বরগুনা সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে এদিন।

আর প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সড়ক প্রশস্তকরণসহ উন্নয়ন এবং ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্প, প্রায় ২৮২ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে’ সায় মিলেছে একনেক সভায়।

অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, প্রায় ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্প, ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সমন্বিত কৃষি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ি এলাকার জনগণের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন’ প্রকল্প, প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়ন’ এবং প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় মিশ্র ফল চাষ’ প্রকল্প অুনমোদন পেয়েছে।