অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে বিষ্ময়
জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের আলোচনায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সারাদেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগে ভরে গেছে। একটি দেশে এমন অবৈধ সংযোগ থাকতে পারে না। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ রোববার পেট্রোসেন্টারের ড. হাবিবুর রহমান মিলনায়তনে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের এই আলোচনার আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, ভবিষ্যতে যে জ্বালানি অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে সরকার সচেতন। সে অনিশ্চয়তা মেটাতে নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই এই অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। তিনি বলেন, জ্বালানি ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এটা জরুরী। বিভিন্ন জ্বালানি ব্যবহার করে চাহিদা মেটাতে হবে। দ্রুত সময়ে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, আগামী ১০/১২ বছরে গ্যাস শেষ হয়ে গেলেও কোন সমস্যা তৈরী হবে না। পরিকল্পনা অনুযায়ি এগুনো হচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। এই বিনিয়োগের অর্থ পেতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমš^য় করতে হবে। বিদ্যুতের দাম সমš^য় একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তা আসলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই। গ্যাসের ব্যবহারে পরিবর্তন এনে বর্তমান গ্যাসকেই আরও ভালভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবাসিকে ব্যবহার করা গ্যাস পুরোপুরি বাদ দিয়ে এলপিজি ব্যবহার করলে ১৩ শতাংশ গ্যাস পাওয়া যাবে। পরিবহনে গ্যাস না দিলে আরও ছয় শতাংশ পাওয়া যাবে। এছাড়া ক্যাপটিভ বিদ্যুতে যে গ্যাস দেয়া হচ্ছে তা বর্তমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দিলে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। কিন্তু এখন সেই গ্যাস দিয়ে ক্যাপটিভে দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হচ্ছে। এই সব গ্যাস বিকল্প ব্যবহার করে এর উপযোগ বাড়ানো যেতে পারে। তিনি বলেন, বাপেক্সকে শক্তিশালি করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করেই বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম নির্ধারন করা হয়। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল করা হয়েছে। কিন্তু বাপেক্সকে শক্তিশালি করার কাজ ঠিকমত হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাসখাতে প্রচুর চুরি হচ্ছে। চুরি বাদ দিয়ে বৈধ উপায়ে যারা বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহার করছেন তারাও ৩০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারে।
তাজুল ইসলাম বলেন, শিল্পখাতে যে জ্বালানি প্রয়োজন তা দেয়া যাচ্ছে না। উদীয়মান শিল্পখাত গ্যাস সংকটে স্থবির হয়ে আছে। এখন উদ্যোক্তা থাকলেও গ্যাস বিদ্যুৎ না থাকায় যথাযথ বিনিয়োগ হচ্ছে না। এজন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিপিসির চেয়ারম্যান এ.এম বদ্দোরুদ্দোজা বলেন, বিপিসি গত ১৪ বছরে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋনগ্রস্ত হয়েছে। এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার কারণে জানুয়ারি থেকে তেল বিক্রিতে লাভ করছে। জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিপিসি যে দেনা আছে তা অনুদান হিসেবে দিয়ে মওকুফ করে দেয়া উচিত।
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমদ আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন। শুরুতে পেট্রোবাংলার নানা কর্মসূচি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলি মো. কামরুজ্জামান।