অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-চ্যালেঞ্জের খোঁজ নিল আইএমএফ
নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ:
সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ অবস্থা জানার পাশাপাশি আর্থিক খাতের নীতি ও কাঠামো সংস্কারের মধ্যে চলা বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা জেনে নিচ্ছে আইএমএফ।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় এসেই কয়েক ঘণ্টা বাদে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসে।
আলাদা আলাদা কয়েকটি বৈঠকে আর্থিক খাতের নীতি ও কাঠামো সংস্কারের যেসব উদ্যোগ গত জুলাই থেকে নেওয়া হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও ফলাফল তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বিশেষ করে বাণিজ্যক ব্যাংক পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদ্ধতিতে আনা পরিবর্তন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ঝুঁকিভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা আনার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রথম দিনের বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘‘তারা সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। রিজার্ভ, জিডিপি, মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে সার্বিক আলোচনা হচেচ্ছ।
‘‘শুধু ঋণকে আলাদা করে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা সামষ্ঠিক অর্থনীতির সব সূচক নিয়েই আলোচনা করছি। যার মধ্যে সবকিছু আছে; এর অগ্রগতি আমরা সব সময় আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।’’
সফরকারী আট সদস্যের এ প্রতিনিধি দল আগামী ৭ই মে পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থানকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও সরকারের নীতি নির্ধারকসহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
সংস্থাটির সঙ্গে ঋণ চুক্তি ও সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে; এক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে আইএমএফ এর বিপিএম৬ পদ্ধতি।
ঋণ ব্যবহারের অগ্রগতি জানতে আইএমএফ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকে
নতুন হিসাব পদ্ধতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ নিয়ে কোনো ঝুঁকি দেখছে না জানিয়ে মেজবাউল বলেন, ‘‘এখনও আমরা রিজার্ভ নিয়ে কোনো ঝুঁকিতে নেই। সামনে বিশ্ব ব্যাংক, জাইকাসহ কয়েকটি সংস্থার ঋণ নিয়ে আলোচনা পাইপলাইনে রয়েছে। আকু পেমেন্ট ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে আমাদের বড় কোনো দায় নেই। তাই এখনও কোনো সমস্যা দেখছি না।’’
এদিন প্রতিনিধি দলটি সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছে দিনভর বিভিন্ন বৈঠক করে। এগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল ও আবু ফরহা মো. নাছেরসহ বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক ও টিমের সদস্যরা অংশ নেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ এর ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জ্বালানি তেল থেকে ভর্তুকি তুলে দিয়ে মূল্য বাড়ানো।
দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো অর্থনীতিতে কী প্রভাব রেখেছে সে বিষয়ে পৃথকভাবে জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দলটি।
আইএমএফের এ দলের এবারের সফরকালের আলোচ্যসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র অর্থনীতির সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে জানিয়ে বলেন, ‘‘অর্থনীতিতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে ও এটিকে এড্রেস করতে কী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে তার ধারণা নিয়েছেন আইএমএফ প্রতিনিধি দল।’’
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে পড়লে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ চায় বাংলাদেশ। দীর্ঘ আলোচনার পর একগুচ্ছ সংস্কার ও নীতি পরিবর্তনের সমঝোতার পর সংস্থাটি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে এর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড়ও হয়। এর আগে ও পরে বাংলাদেশ পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোসহ আর্থিক খাতের কাঠামো ও নীতি সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে।
আগামী অক্টোবরে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় ও অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য আইএমএফ মিশন আবার আসবে ঢাকায়। এর আগে নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে এবার ‘স্টাফ ভিজিটে’ এসেছে প্রতিনিধি দলটি বলে জানান মুখপাত্র।
এদিনের আলোচনার সূচিতে প্রাধান্য পেয়েছে আর্থিক খাতের সংস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন ও আইনি ক্ষমতার ব্যবহার, নতুন নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোতে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ বলে জানান কর্মকর্তারা।
পরবর্তী কিস্তি পেতে আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ে মুখপাত্র মেজবাউল বলেন, ‘‘আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনে কিছু রিফর্ম (সংস্কার) নিয়ে কাজ করছি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের একাধিক রেট একটিতে নিয়ে আসা, সুদহার বাজারমুখী করা ও রিজার্ভ হিসাব আইএমএফ এর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। রিজার্ভ হিসাবে আমাদের গ্রস হিসাবটিও থাকবে।
‘‘যেসব সিদ্ধান্তের কথা আমরা জানিয়েছি তার বিস্তারিত বর্ননা ও বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা জুলাই মাসের আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা থাকবে।’’
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইন সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকার কথাও জানান তিনি।
চাপে থাকা রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ফেরাতে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে কিনা এমন প্রশ্নে মেজবাউল বলেন, “আমরা আমদানিতে মার্জিন বাড়িয়েছি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে। কোনো পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে মার্জিন-বাড়ানো হয়। আবার কমানো হয়। সবই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অংশ। যখন যেটা প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক নিচ্ছে।’’