অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে এলএনজি আমদানি করতেই হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পায়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য এটা জরুরি। অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে এটি মেনে নিতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে মেনে নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান তিনি।
গণভবনে সোমবার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ করতে চাই। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে চাই। শিল্পায়ন করতে চাই। এজন্য আমাদের এলএনজি আমদানি করতেই হবে।

বিএনপি সরকারের সময় ভারতকে মিয়ানমার থেকে পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস আমদানির সুযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে এ সময় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি থাকলে কী করতাম? পাইপলাইনে গ্যাস তো নিতে দিতামই। আমি আমার ভাগটা রেখে দিতাম। আমাকে দিয়ে তারপর নিতে হবে। তখন যদি মিয়ানমার থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনতে পারতাম, আর অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে আমাদের এখন এলএনজি আমদানি না করলেও চলত। কারণ সেখানে প্রচুর গ্যাসের রিজার্ভ আছে। এখন তা পাইপলাইনের মাধ্যমে চীন নিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব্ব যদি ভুল করে বা সরকার যদি ভুল করে, তার খেসারত জনগণকে দিতে হয়।

এ সময় মিয়ানমারের রাখাইনকে বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যান ব্র্যাডলি শেরম্যানের সাম্প্রতিক প্রস্তাবটি অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার যে সীমানা আছে, আমার যে দেশটা; আমরা তাতেই খুশি। অন্যের জমি নিয়ে আসা বা অন্যের কোনো প্রদেশ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। এটা আমরা কখনই নেব না। প্রত্যেক দেশ তার সভেরেনটি (সার্বভৌমত্ব) নিয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইন স্টেট জুড়ে দিতে চায় কেন? এ ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ ও অন্যায় কাজ বলে আমি মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাখাইন স্টেটে প্রতিনিয়ত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা জেনেবুঝে তা আমাদের দেশের সঙ্গে যুক্ত করব কেন? এটা আমরা কখনই করব না। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। সেখানকার লোকেরা যখন আশ্রয় চেয়েছে, মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি।

তিনি বলেন, আশ্রয় দেয়ার অর্থ এটা নয় যে আমরা তাদের রাষ্ট্রের একটা অংশ নিয়ে চলে আসব। এ মানসিকতা আমাদের নেই। এটা আমরা চাই না। প্রত্যেক দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে, সেটাই আমরা চাই।

চীন বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে দেশটির সরকারকে সম্মত করাতে প্রয়াস চালানোর আশ্বাস দিয়েছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমাকে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন। শি জিনপিং বলেছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের কাছে দুই দেশ সমান। কেউ কম বা বেশি নয়।

তিনি বলেন, শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সময়মতো তহবিল ছাড়, ঋণ চুক্তির শর্তাবলি সহজ করার জন্য তার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ অনেক সচেতন। আমাদের ঋণের বোঝা খুব বেশি নয়, যা আমাদের জিডিপির মাত্র ১৪ শতাংশের মতো। সেটাও আমরা সময়মতো পরিশোধ করি। আজ পর্যন্ত কোনো দিন আমরা ব্যর্থ হইনি। আমরা যেটা নিই, তা হিসাব করেই নিই।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু কিন্তু আমরা আমাদের টাকায় করে যাচ্ছি। চীনের ঠিকাদার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি তৈরি করে দিচ্ছে। আমরা কিন্তু পেমেন্ট দিচ্ছি। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প বিভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করছি। বিভিন্ন দেশ যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে, সেটাও আমরা নিচ্ছি। কিন্তু নেয়ার সময় এ বিষয়টা নিয়ে আমরা সবসময় সতর্ক থাকি।