অর্থায়ন, আস্থা অর্জন আর উচ্চ আমদানি শুল্ক ছাদে সৌর স্থাপনে বড় বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অর্থের সংস্থান করা, ভবন মালিকদের আস্থা অর্জন, আইন এবং সুদহার পরিবর্তনের তথ্য জানা না থাকা এবং উচ্চ আমদানি শুল্ক ছাদে সৌর স্থাপনে বড় বাধা।

বৃহস্পতিবার (১৪ই মার্চ) এক ওয়েবিনারে বক্তারা বাংলাদেশে ছাদে সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারণের গুরুত্ব ও সম্ভাবনার কথা উপস্থাপন করতে গিয়ে এতথ্য জানান।

পাক্ষিক এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন এবং গ্লোবাল থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) যৌথভাবে ‘স্কেলিং আপ রুফটপ সোলার ডিপ্লয়মেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারটির আয়োজন করে।

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। কর্পোরেট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

মূল উপস্থাপনায়, আইইইএফএ-এর বাংলাদেশের প্রধান এনার্জি বিশ্লেষক, শফিকুল আলম ছাদে সৌর বিদ্যুতের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে নেট মিটারড এবং নন-নেটমিটারড উভয় ব্যবস্থায় ছাদে ১৬৬.৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে। গত দেড় বছরে কয়েক দফা বিদ্যুতের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি করার ফলে এখন ছাদে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে সাশ্রয়ী ও লাভজনক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প ছাদে সৌর স্থাপনের জন্য বিনিয়োগের সবচেয়ে সস্তা উৎস বলেও তিনি জানান। ছাদে সৌরসহ আরও ৭০টি পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ৪০০ কোটি টাকার এই তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়। ফলে ছাদে সৌরশক্তি বাড়াতে অর্থায়ন কমে যায়। একইভাবে, ইডকল-এর অর্থায়ন স্কিমটিও এ খাতের দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য  যথেষ্ট নয়। তাই ছাদের সৌর বিদ্যুতে বিনিয়োগে বাংলাদেশের আরও অর্থায়ন প্রয়োজন।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশকে এমন একটি বাজারের নকশা করতে হবে যা বাস্তবায়নের গতি বাড়িয়ে ছাদে সৌর বিদ্যুতে বিনিয়োগ উৎসাহিত এবং ঝুঁকিমুক্ত করে। নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই। তবে বিদ্যমান ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াতে হবে এবং পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। স্রেডার সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং ভবন মালিকদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সভাপতি ও এনার্জিপ্যাকের পরিচালক প্রকৌশলী নুরুল আকতার বলেন,  উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং কম সচেতনতা ছাদে সৌর বিদ্যুৎ বাস্তবায়নের গতি ধীর করে দিচ্ছে।

ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইডকলের অর্থায়ন ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে প্রধান হলো রুফটপ সোলার।  তিনি মূল বক্তার সাথে একমত হন যে এই খাতে চাহিদার বিপরীতে ইডকলের অর্থায়ন যথেষ্ট নয়।

বুয়েটের সাবেক ডিন প্রফেসর ইজাজ বলেন, ছাদে সৌর বিদ্যুতের জন্য ফিড-ইন-ট্যারিফ বেশি কার্যকর হতে পারে। কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কারণে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতে ছাদে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করতে হবে।

ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথি এবং আইইইএফএ দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক বিভূতি গার্গ বলেন, বাংলাদেশ ভার্চুয়াল নেট মিটারিং এবং পিয়ার-টু-পিয়ার ট্রেডিংয়ের মতো উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে ভাবতে পারে। ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সৌর প্রযুক্তির ব্যয় ক্রমাগত কমছে এবং ছাদে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ছে।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনে বর্তমানে সৌর স্থাপন খরচ এবং সৌর বিদ্যুতের মূল্য ভিয়েতনামের ফিড-ইন-ট্যারিফের চেয়ে সাশ্রয়ী।