অর্থ পরিশোধে ‘হিমশিম খাচ্ছে’ জ্বালানি খাত: সিপিডি
বিডিনিউজ:
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, উৎপাদন সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকলেও সাবস্টেশন পর্যায়ের অদক্ষতার কারণে দেশে ঘন ঘন লোড শেডিং।
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়মিত ত্রৈমাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিষয়টি তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।
সিপিডি এখন থেকে প্রতি তিন মাস পর পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এতে চলমান প্রকল্পের অগ্রগতির পাশাপাশি অন্যান্য কাজের গবেষণামূলক বিশ্লেষণ করা হবে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে গবেষক প্রিয়তি বলেন, জুলাইয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২৭ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৫০ শতাংশের মতো অর্থাৎ দৈনিক ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এর পরেও এই তিন মাসে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।
ওই তিন মাসের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে বেশি লোড শেডিং হয়েছে এবং সেটা জুলাই ও অগাস্টের মাসের তুলানায় দ্বিগুণ। ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা এবং রংপুর বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা কম। এসব এলাকাতেও লোড শেডিং হয়েছে আগের দুই মাসের তুলনায় দ্বিগুণ। এর অর্থ হচ্ছে আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন ও ট্রান্সমিশন সিস্টেমটা এখনও শহরকেন্দ্রিক। রাজধানী শহরের বাইরে এগুলো দুর্বল অবকাঠামোর পর্যায়ে রয়েছে।
“ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের অদক্ষতার কারণে বিদ্যুতের লোড শেডিং দিতে হয়েছে। জুন মাসে ট্রিপিং ও জরুরি মেরামতের জন্য সাবস্টেশন পর্যায়ের ট্রান্সমিশন লাইনে ২৩১ ঘন্টার লোড শেডিং দিতে হয়েছিল, যা অগাস্টে এসে দুই হাজার ৯৩৪ ঘন্টা হয়েছে।”
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি বৈচিত্রের বর্ণনা দিয়ে প্রিয়তি বলেন, বিগত তিন মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের ব্যবহার একটু কমেছে। এ সময়ে তেলের ব্যবহার কমে গিয়ে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে এসে দেখা যাচ্ছে তেলের ব্যবহার যতটা কমেছে, তার চেয়ে বহুগুণে বেড়ে গেছে কয়লার ব্যবহার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সিপিডির এ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ বছরে ৮২টি আইপিপি ও ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে আগের এক বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুণতে হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ কাতার ও ওমান ট্রেডিংয়ের কাছ থেকে এখন বছরে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পার আনাম (এমটিপিএ) এলএনজি আনছে। ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন করে ৪৭টি কূপ খনন করার কথা। সেখান থেকে মাত্র ৮টি কূপ খনন করা হয়েছে বলে সিপিডির প্রতিবেদন বলছে।
অর্থ পরিশোধে ‘হিমশিম খাচ্ছে’ জ্বালানি খাত
আমদানি প্রবণতার কারণে পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিদেশি সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ করতে ‘হিমশিম খাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
দেশের তেল-গ্যাস উত্তোলনের চেয়ে আমদানিতে গুরুত্ব বেশি দেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তার ধারণা।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের ৬৭০ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট বকেয়া পড়েছে বিপিসির। অন্যদিকে পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি বাবদ বকেয়া পড়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এই দায় মেটাতে পেট্রোবাংলা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে ৬ মাসের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট ঋণ নিচ্ছে। সিন্ডিকেট ঋণ সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি মনে হলেও বিপদ বাড়াবে। আমরা এখনই বকেয়া পরিশোধ করতে পারছি না, এরসঙ্গে সুদসহ বোঝা যুক্ত হচ্ছে।
“আমদানিকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেভাবে দেশি জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যে কারণে আজকের এই সংকট। নতুন গ্যাস কূপ না করলেও পুরাতন গ্যাস কূপের সংস্কার যথাসময়ে হলেও এই সংকট হতো না। যত দ্রুত সম্ভব আমদানি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।”
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিন্ন ভিন্ন ট্যারিফ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সবকিছুর মূলে হচ্ছে দায় মুক্তি আইন। যদি প্রতিযোগিতামূলক বাজার থাকতো তাহলে এমন অসম চুক্তি হত না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে মালিকের নাম বসালে দারুণ একটি যোগসূত্র দেখা যায়। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি এসব সুবিধা পাচ্ছে। চুক্তির অস্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যায়।”