অর্ধেক দামে কাতার থেকে গ্যাস কিনবে ভারত

কাতার থেকে গ্যাস আমদানির একটি চুক্তি সংশোধন করেছে ভারত। এর সুবাদে ভারত পূর্ববর্তী চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে অর্ধেক কম দামে গ্যাস কিনবে। এতে জ্বালানি বাবদ বার্ষিক ৬০৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে ভারতীয় ভোক্তাদের। কাতারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত পুনর্নির্ধারণের বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের বৃহত্তম গ্যাস আমদানিকারক পেট্রোনেট বৃহস্পতিবার কাতার গ্যাসের সঙ্গে একটি সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সংশোধিত এ চুক্তিকে জ্বালানি খাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৃহত্তম কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে মন্তব্য করেছে রয়টার্স। প্রথম থেকেই নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক বাজারে বৃহত্তর জালানি ক্রেতা হিসেবে ভারতের অবস্থানের সুফল আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন।

কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত রাসগ্যাসের সঙ্গে পেট্রোনেটের ক্রয় চুক্তি এক দশকের বেশি সময়ের পুরনো। এলএনজি ক্রয়ের ব্যাপারে ১৯৯৯ সালে কাতার ও ভারতের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর পর ২০০৪ সালে রাসগ্যাস ও পেট্রোনেট ২৫ বছর মেয়াদি একটি ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর আওতায় পেট্রোনেট রাসগ্যাস থেকে প্রতি বছর ৭৫ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার কথা। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত ২০১৫ সালে তেল-গ্যাসের মূল্য পড়তির দিকে থাকায় পেট্রোনেট চুক্তিমতো এলএনজি গ্রহণ করেনি। পরিবর্তে বিভিন্ন স্পট শিপমেন্ট থেকে সস্তায় এলএনজি কিনে চাহিদা মেটায় পেট্রোনেট। ২০০৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী, এজন্য পেট্রোনেট রাসগ্যাসকে দেড় বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা। কিন্তু ভারত সরকার ক্রেতা হিসেবে নিজেদের অবস্থানের সুফল আদায়ে প্রয়াসী হয় এবং রাসগ্যাসের সঙ্গে পেট্রোনেটের চুক্তি নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দুপক্ষ গত ১০ নভেম্বর একটি সমঝোতায় উপনীত হয়।

সে অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাসগ্যাস ও পেট্রোনেট একটি সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করে।

সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী ২০২৮ সালে পুরনো চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত পেট্রোনেট রাসগ্যাস থেকে এলএনজি ক্রয় করবে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সরবরাহকৃত প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৬-৭ ডলার। ভারতের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এ কথা জানিয়ে বলেছেন, আগের চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ১২-১৩ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এলএনজির মূল্য পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় ভারতীয় ভোক্তাদের ৪ হাজার কোটি রুপি সাশ্রয় হবে বলে প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এর ফলে দুপক্ষের স্বার্থ রক্ষা পাবে। সংশোধিত চুক্তিতে পেট্রোনেট প্রতি বছর অতিরিক্ত এক মিলিয়ন টন এলএনজি কিনতে সম্মত হয়েছে। অতিরিক্ত এলএনজি চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করবে পেট্রোনেট। ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি), ভারত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, গ্যাস অথোরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (গেইল) ও গুজরাট স্টেট পেট্রোলিয়াম করপোরেশন পেট্রোনেটের কাছ থেকে সরবরাহ পেয়ে থাকে।

সংশোধিত চুক্তিতে রাসগ্যাস পেট্রোনেটের প্রদেয় দেড় বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ মওকুফ করতে রাজি হয়েছে।

পেট্রোনেটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও প্রভাত সিং বলেন, গ্যাসের মূল্য আরো কমবে— এমন আশঙ্কার মধ্যে বছরটি শুরু হচ্ছে। ক্রেতা হলেও আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। নতুন চুক্তি সে উদ্বেগ অনেকটা নিরসন করবে।

তিনি আরো বলেন, সংশোধিত ধারাগুলো ভারতের বাজারের প্রতি দুপক্ষের আস্থার সাক্ষী। একই সঙ্গে পরিচ্ছন্ন ও অধিকতর কার্যকর জ্বালানি হিসেবে এলএনজির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারেরও প্রতিফলক।

রাসগ্যাস সিইও মুবারাক আল-মুহান্নাদি বলেন, এ চুক্তি পেট্রোনেটের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের দৃঢ়তা দেখিয়েছে।