আইইএর পূর্বাভাস: রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি অবস্থান করবে কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা

২০২২ সালে কয়লার বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। চলতি বছরও ব্যবহার রেকর্ড উচ্চতা অবস্থান করবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় ব্যবহার কমলেও এশিয়ায় জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে লক্ষণীয় মাত্রায়। বৈশ্বিক ব্যবহার বৃদ্ধিতে অঞ্চলটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়।

কয়লা বাজারবিষয়ক ষান্মাসিক প্রতিবেদনটিতে আইইএ জানায়, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে ৮৩০ কোটি টন কয়লা ব্যবহার হয়েছিল, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বিশ্বের ইতিহাসে কখনো এক বছরে এত বেশি কয়লা ব্যবহার হয়নি।

২০২৩ ও ২৪ সালে শিল্প খাতে জ্বালানিটির ব্যবহার ব্যাপক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে এর ব্যবহার কিছুটা কমার আশঙ্কা করছে আইইএ। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে জ্বালানিটির ব্যবহারে বিস্তর বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হতে পারে।

২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রতি চার টনে তিন টন কয়লাই ব্যবহার হবে চীন, ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়। ২০২২ সালে ইউরোপের দেশগুলোয় শিল্প খাতে কয়লার ব্যবহার ছিল তুলনামূলক কম। দেশটির কয়লাচালিত বিদ্যুৎ খাতেও ব্যবহার বেড়েছিল সাময়িকভাবে। ফলে ওই বছর অঞ্চলটিতে কয়লার চাহিদা ছিল যৎসামান্য।

আইইএ জানায়, ইউরোপে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সম্প্রসারণ ঘটছে। এতে চলতি বছর অঞ্চলটিতে কয়লা ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমতে পারে। অন্যদিকে সম্প্রতি পরমাণু ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি ইউরোপের দেশগুলোকে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে সহায়তা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কয়লা ব্যবহার থেকে সরে আসতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে দেশটিকে সহায়তা করছে প্রাকৃতিক গ্যাসের নিম্নমুখী দাম।

কয়লার বৈশ্বিক বাজার কয়েক বছরে অনেক বেশি অস্থিতিশীলতার মধ্যে ছিল। ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব জ্বালানিটির বাজারকে বিপর্যস্ত করে তোলে। ২০২১ সালে কভিডের ধাক্কা সামলে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাজার আবারো টালমাটাল হয়ে পড়ে। তবে চলতি বছর বাজার পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য।

আইইএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ বছরের প্রথমার্ধে কয়লার চাহিদা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭০ কোটি টনে। বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা ১ শতাংশ এবং বিদ্যুৎবহির্ভূত শিল্প খাতে চাহিদা ২ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় ধারণার চেয়ে অনেক বেশি কমেছে কয়লার চাহিদা। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ও ইইউর দেশগুলোয় ১৬ শতাংশ কমেছে। তবে শীর্ষ দুই ব্যবহারকারী দেশ চীন ও ভারতে চাহিদা ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

আইইএর জ্বালানি বাজার ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক কেইসুক সাদামোরি বলেন, ‘‌জ্বালানি খাতে কার্বন নিঃসরণের একক বৃহৎ উৎস কয়লা। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে এর ব্যবহার থেকে সরে আসছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণেই সেসব দেশে চাহিদা কমছে। তবে এশিয়ার দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপক মাত্রায় বাড়ালেও সেখানে কয়লার চাহিদা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। যেসব দেশে জ্বালানি চাহিদা খুব দ্রুত বাড়ছে, সেসব দেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা দরকার। এ খাতে বড় ধরনের নীতি প্রণয়ন ও বিনিয়োগ প্রয়োজন।

২০২১ সালে বৈশ্বিক কয়লা ব্যবহারে দুই-তৃতীয়াংশ অবদানই ছিল চীন ও ভারতের। এর অর্থ হলো দেশ দুটি সম্মিলিতভাবে বাকি দেশগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ কয়লা ব্যবহার করেছে। চলতি বছর কয়লা ব্যবহারে এসব দেশের হিস্যা থাকবে ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে তিন দশক আগে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা ছিল ৪০ শতাংশ। চলতি দশকে তা কমে ৩০ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

২০২২ সালে চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া রেকর্ড পরিমাণ কয়লা উত্তোলন করেছিল। চলতি বছরের মার্চে চীন ও ভারত সম্মিলিতভাবে রেকর্ড কয়লা উত্তোলন করে। এর মধ্যে চীনের উত্তোলন ৪০ কোটি টন ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ভারতের উত্তোলন প্রথমবারের মতো ১০ কোটি টন অতিক্রম করেছে।

কয়লার বৈশ্বিক বাজার গত বছর অনেক বেশি অস্থিতিশীল ছিল। ওই বছর জ্বালানিটির দাম আকাশচুম্বী ছিল। তবে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাজারদর নিম্নমুখী হয়ে ওঠে। কারণ পর্যাপ্ত সরবরাহ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমে যাওয়া।

এদিকে দাম কমে যাওয়ায় মূল্যসংবেদনশীল অনেক দেশে জ্বালানি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনে কয়লা আমদানি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আইইএ বলছে, চলতি বছর জ্বালানিটির বাণিজ্য ৭ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে, যা চাহিদা প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যাবে।

– বণিক বার্তা