আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস

আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। পৃথিবীর ৯০টি দেশের ৪০ কোটি আদিবাসীর মতো বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণ আজ ৯ আগস্ট পালন করবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।
এবারের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুক্তিকামী জনতার সেতুবন্ধন’। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করেছিল। সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে সদস্য রাষ্টগুলোকে ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস পালনের আহ্বান জানায়। এরপর ১৯৯৫ থেকে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১৪ দুটো দশককেই আদিবাসী দশক হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের একটা বিরাট অংশ বাস করে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়। এ অঞ্চলের পাহাড়ি আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে ছিল অধিকারবঞ্চিত। এক সময় এ পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরা তাদের প্রাপ্য অধিকারের জন্য সশস্ত্র লড়াই শুরু করে। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এ লড়াই অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বন্ধ হয়। ওইদিন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা শান্তি চুক্তি নামে দেশ-বিদেশে পরিচিত। চুক্তির পর এ অঞ্চলের আদিবাসীরা স্থায়ী শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির আশায় বুক বাঁধে, স্বপ্ন দেখে নতুনের। কিন্তু আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য আদিবাসীদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। আদিবাসীদের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আজ আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
আদিবাসীদের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ি অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা থাকলেও তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। চুক্তি মোতাবেক আঞ্চলিক পরিষদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা হয়নি। প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের ভূমি ফেরত দেয়া হয়নি, রাবার চাষ ও অন্যান্য খাতে প্রদত্ত জমির লিজ এখনো বাতিল হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের স্বীকৃতি ও এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের বিধান করা হলেও তা বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে আদিবাসীরা তাদের অধিকার থেকে বারবার বঞ্চিত হচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারও আদিবাসীরা এ দিনে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি তুলবে। এবারের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে সরকারের কাছে অধিকারবঞ্চিত আদিবাসীদের এটাই হয়তো প্রাণের দাবি হিসেবে পুনরায় উত্থাপিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে পাঁচদিনের কর্মসুচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আগামী ৬ আগস্ট জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন, ৮ আগস্ট বিকাল ৩টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আলোচনা সভা, ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ১০টায় সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১০ আগস্ট জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ১১ আগস্ট কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের মূল অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে।