আজ বাংলা বর্ষের প্রথম দিন

আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষের প্রথম দিন। রাজধানীসহ সারাদেশে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে নববর্ষ।  বাংলা দিনপঞ্জিকায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ১৪২৩ সনের দিন গণনা। আপন জাতিসত্তার আলোকে নিজেকে চিনে নেওয়ার তাগিদে উদ্বুদ্ধ আবালবৃদ্ধবনিতা সারা দেশে আজ মেতে উঠেছে নববর্ষের বৈশাখী উৎসবে।
জীর্ণ পুরাতনকে পরিত্যাগ করে; জরা, গ্লানি, ব্যর্থতা, হতাশাকে বিদায় দিয়ে নতুন দিনে, নতুন সম্ভাবনাকে স্বাগত জানানো হলো দিনের সূচনায়। তারপর গানের আসর, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলায় ঘুরেফিরে, প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে কেটে যাবে বেলা। পোশাকে-আশাকে আছে বাঙালি ঐতিহ্যের বর্ণাঢ্য প্রকাশ, খানাপিনাতেও। প্রতিদিনের রুটিনমাফিক জীবনে এক ভিন্নতর স্বাদ এনে দিয়েছে বছরের প্রথম দিন।
ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগসহ জীবনযাত্রার বহুবিধ প্রয়োজনে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির অনুসরণ এখন অনিবার্য। তা সত্ত্বেও বাঙালি তার নিজের বর্ষপঞ্জিকার গুরুত্ব অপ্রয়োজনীয় বোধ করেনি। কৃষিনির্ভর এই দেশের গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ তাদের চাষাবাদ, ঋতু পরিক্রমার অনুসরণ, নানা তিথি-পার্বণ, আচার অনুষ্ঠান পালনে বাংলা বর্ষপঞ্জিই অনুসরণ করে থাকে। তবে বাঙালি আন্তর্জাতিকতার সঙ্গে আপন সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা নববর্ষকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। বাংলা নববর্ষ তথা পয়লা বৈশাখ এখন বাঙালির জীবনে সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অভিন্ন হৃদয়াবেগে আজ মিলিত হই এই বিপুল আনন্দযজ্ঞে। সব মতপার্থক্য, ভেদাভেদ ঘুচিয়ে সবাইকে এক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করে তোলার অন্তর্নিহিত শক্তিই নিছক আনন্দ উৎসবের স্তর থেকে এক মহৎ মানবিক আয়োজনে উত্তরণ ঘটিয়েছে বৈশাখী উৎসবের।
আজ সরকারি ছুটির দিন। বরাবরের মতোই সকাল থেকে ঢাকা মহানগরে নেমেছে সুবেশ নরনারীর ঢল। রমনার বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী প্রভাতি সংগীতানুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে সূচনা হয়েছে উৎসবের সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিকতার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়েছে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। উৎসবের মূল কেন্দ্র রমনা-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক হয়ে সারা শহরই হয়ে উঠছে উৎসবমুখর। এবার অবশ্য নিরাপত্তার জন্য বিকেল পাঁচটার মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। তবে উৎসবের রেশ থেকে যাবে তার পরেও।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সুখী, সুন্দর, নীরোগ, কল্যাণময় জীবন কামনা করেছেন।