আজ মাগুরছাড়া দিবস: ১৯ বছরেও ক্ষতি আদায়ের চেষ্টা হয়নি
মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্র বিষ্ফরোনের ক্ষতি আদায়ের যথাযথ চেষ্টাই হয়নি। ১৯ বছর পার হয়েছে। একাধিক সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এই ক্ষতি আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে দুর্ঘটনায় গ্যাস উবে পুড়ে গেলেও তার ক্ষতিপূরণও আদায় হয়নি।
আজ ১৪ই জুন মাগুরছাড়া দিবস। ১৯৯৭ সালের এই দিনে মধ্যরাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মধ্যবর্তী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকার মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপ খনন করার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুড়ে যায় হাজার কোটি টাকার গ্যাস। পুড়ে যায় আশপাশের বনাঞ্চল, রেল লাইন, সড়কপথ, ঘর-বাড়ি, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকা। কিন্তু সেই পুড়ে যাওয়া মূল্যবান গ্যাস ও পরিবেশের দায় কার তা আজও ঠিক করা যায়নি।
স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক আদালতে এই ক্ষতি আদায়ের জন্য কোন মামলা করা হয়নি।
একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি সে সময় জানিয়েছিল, গ্যাস ও আশপাশের পরিবেশ মিলে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এই বিষ্ফোরনে। টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে বিষ্ফোরনের প্রায় দ্বিগুণ।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষেত্র থেকে উত্তোলনযোগ্য ২৪৫ দশমিক ৮৬ বিসিএফ গ্যাস উবে গেছে। যার সে সময়ের বাজার দাম তিন হাজার ৮৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
তবে কেউ কেউ মনে করেন মজুদ থাকা ৪৮৫ দশমিক ৮৬ বিসিএফ গ্যাস পুড়ে গেছে।
গ্যাসক্ষেত্রের আশপাশে ছোট-বড় ৩৯টি চা বাগানের ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয় ৪৬ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৮৩০ টাকা। বনাঞ্চলের মোট ক্ষতি ধরা হয় নয় হাজার ৮৫৮ কোটি ৩১ লাখ। দুই হাজার ফুট রেলওয়ে ট্র্যাক পুড়ে যায়। যার দাম ৮১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। সড়কপথ নষ্ট হওয়ার জন্য ২১ কোটি, গ্যাস পাইপলাইন পোড়ার জন্য ১৩ লাখ, বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতির জন্য এক কোটি ৩৫ লাখ নয় হাজার ১৮৬, খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজ পুড়ে যাওয়ায় ১৮ লাখ, বাসমালিকদের রাজস্ব ক্ষতি ১২ লাখ টাকা হয়েছে বলে কমিটি জানায়।
মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল এই গ্যাসকূপ খননের করছিল। কূপের ৮৫০ ফুট গভীরে পৌঁছালে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে।এতে প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনে উদ্যানের গাছপালা, মাগুরছড়া পানপুঞ্জি, ফুলবাড়ী চা-বাগানের একাংশ, ঢাকা-সিলেট রেললাইন, ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কপথ, বিদ্যুৎ লাইনসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।
দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পশুপাখি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক শোষণ ব্যবস্থা, প্রকৃতিক উৎপাদন, পশুপাখির বসতি, ভূপৃষ্ঠস্থ প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ, ভূগর্ভস্থ পানিস্তরের অধোগমন ও প্রাণিবৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে।
তদন্ত কমিটি করে এসব প্রতিবেদন নেয়া হলেও সে অনুযায়ি ক্ষতি আদায়ে পরে আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।