আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এক মাসে ২৫০ কোটি টাকা লোকসান
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ডিসেম্বর মাসে ২৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বিপিসি’র। তবে এখনই লোকসান হওয়ার কথা নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
গত দুই মাস আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালাতি তেলের দাম পর্যায়ক্রমে বাড়ছেই। দেশে তেলের চাহিদা এখন বেশি হওয়াতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসানেও বেশি হবে।
বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৭০ ডলার। বর্তমানে বিপিসি প্রতি লিটার ডিজেলে চার টাকারও বেশি এবং প্রতি লিটার ফার্নেস তেলে প্রায় ১০ টাকা করে লোকসান দিচ্ছে। তবে পেট্রল ও অকটেনে বিপিসির লাভ হচ্ছে।
বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, জ্বালানি তেলের যে দাম দেশে স্থির করে রাখা হয়েছে, তাতে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার হলেও বিপিসির লোকসান হওয়ার কথা নয়। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে লাভ-লোকসানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তেলের দাম বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত সহনীয় হলেও দাম বাড়তে থাকলে এবং তা ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার হলে দেশের অর্থনীতি চাপে পড়বে।
বিপিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে মোট প্রায় ৫৯ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ টন ডিজেল ও প্রায় ৯ লাখ টন ফার্নেস তেল। এ বছর মোট ৬১ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হবে। এর মধ্যে ৫০ লাখ টনের বেশি থাকবে ডিজেল ও ফার্নেস তেল। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার বাড়ানোর জন্যই তেলের আমদানি বাড়াতে হচ্ছে বলে বিপিসি সূত্র জানায়।
বিপিসির সূত্র জানায়, তেলের আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলারে। বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কেনা বিদ্যুতের দামও পরিশোধ করতে হয় ডলারে। এদিকে তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি ডলারের মূল্যও বেড়েছে।
সূত্র জানায়, এ বছরের মধ্যে আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে পারে। আসছে সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোই বেশি করে চালাতে হবে। এজন্য গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন তেল বেশি আমদানি করতে হবে।
বিপিসির সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের মধ্যভাগ থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে। প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রায় দুই বছর ছিল ৩০ থেকে ৫০ ডলারের মধ্যে। কিন্তু দেশে দাম না কমানোয় বিপিসি ২০১৪-১৫ সালে চার হাজার ২০৮ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ সালে সাত হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ সালে চার হাজার ৫৫১ কোটি টাকা লাভ করে।