আবাসিকে গ্যাসের সমস্যা থাকবেই – নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আবাসিক খাতে গ্যাসের সমস্যা থাকবেই। এটি আগেও বলা হয়েছে। যারা আবাসিকে পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহার করছেন কিংবা যারা ব্যবহার করছেন না, তারা ধীরে ধীরে এলপিজি (লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার করুন।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবনে এক সেমিনার ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নবায়ণযোগ্য শক্তি: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শক্তি ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ সৌরশক্তি সমিতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সৌরশক্তি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুল হক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এপার্টমেন্টে এটি ব্যবহারের উপযোগিতাও রয়েছে। আবাসিক খাতে আগামী দিনে সবাই এলপিজিতে চলে যাক। আগামী তিন বছরে বাংলাদেশে আবাসিক চাহিদার ৭০ শতাংশ যাতে এলপিজি থেকে ব্যবহার করা যায়, সরকার সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে গ্যাসের চাপ কমে আসায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সমস্যা মোকাবেলায় সরকার কাজ করছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় প্রথম গ্যাস সরবরাহ করা। এটিতে অগ্রাধিকার রয়েছে। সে জায়গার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শিল্প-বাণিজ্যের উন্নয়নে গ্যাস সরবরাহ করতে চাচ্ছি।
আবাসিক খাত বাদ দিয়ে শুধু শিল্প খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেটাও বলছি না। চাইছি, যে পরিবর্তনটা আসছে, সেটার দিকে যেন সবাই ধাবিত হয়। চাইছি এলপিজি যাতে কাজে লাগে। সেটা সকলের জন্য সাশ্রয়ী করার চেষ্টা হচ্ছে, সকলে যাতে সেটা পায়।
নসরুল হামিদ বলেন, শিল্প এলাকায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শিল্প এলাকায় যে পরিমাণ গ্যাস দরকার, হয়তো পাঁচ-ছয় মাস সময় লাগতে পারে, কিন্তু তারা পাবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আসতে সে সময়টা লাগবে। আর আবাসিক খাতে গ্যাসের যে এখন সমস্যা হচ্ছে, দুই-তিন দিনের মধ্যে তা কমে আসবে। বাখরাবাদ পাইপ লাইনে যে সমস্যা সেটার সমাধান করা হচ্ছে। এটার জন্য তিন-চারদিন লাগতে পারে। ভবিষ্যতে এলপিজি ব্যবহার করলে এই চাপের সমস্যা থাকবে না। এলপিজি’র দাম এখন অনেক কমে গেছে এবং আরও কমাতে সরকার কাজ করছে।
আবাসিক গ্রাহকদের এলপিতে যেতে বাধ্য করতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুই-একটি শহর ছাড়া সব জায়গায় এলপি গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। তারা কীভাবে কি করছে? তারা নিশ্চয় কোনো না কোনোভাবে ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। ঢাকা শহর তো পুরো বাংলাদেশ না, সেটা বুঝতে হবে। ৭০ শতাংশ জ্বালানি তো শহরের বাইরে। তারা কীভাবে জ্বালানি ব্যবহার করছে আমরা সেদিকে যাচ্ছি।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নসরুল হামিদ বলেন, নবায়ণযোগ্য শক্তি খাতের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মহাপরিকল্পনা তৈরীর কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতে শিক্ষক ও গবেষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দেশের ১০ ভাগ বিদ্যুৎ চাহিদা নবায়ণযোগ্য শক্তি থেকে পূরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই দেশে সোলার পার্ক স্থাপন করা হবে।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সৌরশক্তি সমিতির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহতাশাম হোসেন বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্যুতের একটি বড় অংশ আসবে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। তখন দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ চলে যাবে। নবায়নযোগ্য শক্তির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এতে অন্যান্য শক্তির চেয়ে কম পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকে। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি কম থাকে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি কিন্তু এ সম্পদকে কাজে লাগাতে পারিনি। ক্ষুদ্র একটি অংশ কাজে লাগাতে পারি। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে সবাইকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে নবায়নযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগানো যাবে।
টেকসই ও নবায়ণযোগ্য শক্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ( স্রেডা) চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার বলেন, ৬ বছর আগে শতকরা ৪৭ভাগ লোক বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারত। বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৭৫ ভাগে।