আমার সুরক্ষা আমার অধিকার
দুর্ঘটনা প্রতিদিন ঘটেই চলেছে। যেন নিত্যসঙ্গী। হয় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগছে, না হয় পাইপ ছিদ্র হয়ে গ্যাস বের হয় আগুন লাগছে। না হয় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। অপঘাতে মৃত্যুকে সাথে নিয়ে বসবাস। যেন নিয়তি।
কিন্তু আসলে কি নিয়তি? তা নয়। মোটেই নয়। এগুলো উদাসীনতা আর জবাবদিহি না থাকার কারণ। দিনের-পর-দিন এমন ঘটনা ঘটলেও এনিয়ে কারো জবাবদিহি নেই। যেন কারো দায় নেই।
আজ পর্যন্ত এমন কোনো নজির নেই যে, এ ধরনের দুর্ঘটনার শাস্তি হয়েছে। সাময়িক কয়েকজন বরখাস্ত। পরে লোকচক্ষুর অগোচরে আবার তা স্বাভাবিক। বহাল তবিয়তে কর্মরত। কারণ সত্যিকারের ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপনাকে এনিয়ে দায়ী করা হয় না। ঘটনা যাতে আর না হয় সেদিকে নজর দেয়া হয় না। অনেকটা প্রকৃতির উপর ছেড়ে দিয়েই চলতে থাকে। একবার সংযোগ দিয়ে দিলাম বা লাইন টেনে দিলাম, আর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শেষ। শুধু মাস গেলে বিল নেয়াটাই যেন দায়িত্ব। এভাবেই চলছে।
শুধু জনগণের সচেতনতা আর অসচেতনতার দায় দিয়ে পার পাওয়ার বিষয় এটি নয়।
অবৈধ গ্যাস বিদ্যুতের লাইন থেকে দুর্ঘটনা বেশি হয় সত্য। কারণ এগুলো নিম্নমানের হয়। আর যথাযথ হয় না। তা সে বিদ্যুৎ গ্যাস দুটো সংযোগের ক্ষেত্রেই। কারণ অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং মানসম্মত জিনিস দিয়ে এগুলো হয় না। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
অবৈধ সংযোগ যেমন আছে, তেমন তার বহু কারণও আছে। এসব কারণ চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অসচেতনতায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলো, তার দায় আমার। কিন্তু সিলিন্ডারের মুখে যে নিম্নমানের সামগ্রী ছিল, কিংবা তা যে কখনোই পরীক্ষা করা হয়নি – যে ঠিক আছে কিনা? তার দায় কার? চুলা খোলা রাখার কারণে ঘরে গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটল, তার দায় আমার। কিন্তু রাস্তা থেকে পাইপ ছিদ্র হয়ে আমার ঘরে গ্যাস ঢুকলো, তার দায় কার? ঘরে বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হলাম, তার দায় আমার। কিন্তু রাস্তায় হাঁটছি এমন সময় তার ছিড়ে পড়ল – এর দায় কার? এসব দায় কে নেবে? তার জন্য কি শাস্তি হবে না?
এগুলো নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা কখনই দেখা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু এর শেষ কোথায়? দুদিন পরে হয়তো সেই আগের মতই অব্যবস্থাপনাযর মধ্য দিয়েই চলতে থাকবে। চোখের সামনেই। অতীতে যেমনটি হয়েছে। অতীতে দুর্ঘটনা ঘটেছে আর তখন কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু পরে আবার যা তাই। অব্যবস্থাপনা আর অব্যবস্থাপনা।
বিদ্যুৎ গ্যাসের বিলের সাথে বাড়তি কিছু টাকা নেয়া হয়। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের সময় এগুলো থাকে। যা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। কিন্তু সে খরচ কোথায় করা হয়? বিতরণ সঞ্চালনের প্রত্যেক কোম্পানি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখে। কিন্তু সে অর্থ খরচ করা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে।
কোন গ্রাহক যদি গ্যাস বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিল না দেন, তবে তার কোমরে দড়ি পরানোর আইন আছে। কিন্তু গ্রাহককে যদি জীবন দিতে হয়, তার বিচার পাওয়ার উপায় নেই। তার সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায় যেন কারো নেই। সুরক্ষা যে অধিকার, আমি সুরক্ষিতভাবে পরিষেবা নেব, এটা যে আমার অধিকার, তা এসব বিতরণ কোম্পানিগুলোর ভুলেই গিয়েছে। শুধু গ্রাহককে সচেতন থাকার অনুরোধ করেই দায়িত্ব শেষ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমি সুরক্ষিত থাকবো। এটা আমার অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো প্রশ্নকে ঊর্ধ্বে রেখে।
আর মৃত্যু দেখতে চাই না। আর দুর্ঘটনা দেখতে চাই না। আর দুশ্চিন্তা নিতে চাই না। আর অপঘাতে মৃত্যুর জন্য কাঁদতে চাই না। এর যথাযথ ব্যবস্থা চাই। এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আর চাই, এমন হলে তার শাস্তি।
আমার সুরক্ষা আমার অধিকার এর বাস্তবায়ন চাই।