আরও এক লাখ ২০ হাজার গ্যাস প্রি-পেইড মিটার স্থাপন মার্চ থেকে

ঢাকা মহানগরীসহ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (টিজিটিডিসিএল) আওতাধীন এলাকার আবাসিক গ্রাহকরা আরও ১ লাখ ২০ হাজার প্রি-পেইড মিটার পেতে যাচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এখন মিটার স্থাপন শুরু করার পূর্বপ্রস্তুতি চলছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পনিচালক আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ্ বলেন, আগামী মার্চ মাসে মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর আগে তিতাসের আওতাধীন এলাকায় মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রি-পেইড মিটার স্থাপন গ্যাসের গ্রাহকস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং জাতীয় জ্বালানি সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মিটার ছাড়া দুই চুলার আবাসিক গ্রাহকেরা প্রতি মাসে প্রায় ৭৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করবেন ধরে নিয়ে মাসিক বিল ধার্য করা হয়েছে ৯৭৫ টাকা। কিন্তু যে গ্রাহকেরা মিটার পেয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, কোনো গ্রাহকই মাসে ৫০ ঘনমিটারের বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন না। ফলে তাঁর মাসিক বিল হয় ৬০০ টাকারও কম। কোনো কোনো গ্রাহকের ব্যবহার এতই কম যে এক হাজার টাকার গ্যাসে তাঁদের তিন মাস পর্যন্ত চলে।
এইভাবে প্রি-পেইড মিটার স্থাপিত হলে গ্রাহকের যেমন খরচ কমে তেমনি প্রচুর গ্যাসেরও সাশ্রয় হয়। গ্যাসের প্রকৃত ব্যবহারের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। ফলে গ্যাসের অপচয় এবং চুরি বন্ধ হয়। এই বিবেচনায় প্রায় ৫ বছর আগে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় গ্যাস ও বিদ্যুতের সব শ্রেণির গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার। তারপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন থেকে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হলেও মিটার স্থাপনের গতি আশাব্যঞ্জক নয়। তাই অগ্রগতিও কম।
তিতাসের মোট আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। তারপর এই এক লাখ ২০ হাজার মিটার স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া জাপান ব্যাংক অফ ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (জেবিআইসি)-এর অর্থায়নে আরও এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমান প্রকল্পের এক লাখ ২০ হাজার এবং জেবিআইসির অর্থায়ন-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পরও প্রায় ২০ লাখ আবাসিক গ্রাহক মিটারবিহীন থাকবেন। এদের সবাইকে মিটারের আওতায় আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এই গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দিতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে যা সংস্থানের কোনো উৎস এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। তাছাড়া, কাজটি যথেষ্ঠ সময়সাপেক্ষও বটে। তাই এখন এ বিষয়ে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপিত হলে গ্যাস খাতে চুরি, অপচয়, অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হয়ে গ্যাস বিপণন ব্যবস্থায় শৃংখলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হতে পারে। সেই উদ্দেশ্যেই সরকার প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এর বাস্তবায়নে শ্লথ গতি গ্রাহকদের জন্য হতাশার। কারণ মিটারবিহীন গ্রাহকেরা ব্যবহারের তুলনায় বেশি টাকা বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলো মিটার সরবরাহ করে প্রতি মাসে তাঁর দাম বাবদ অর্থ নেওয়ার যে পদ্ধতি চালু করেছে এটা রেগুলেটরি বিধি-বিধানের পরিপন্থী। এর পরিবর্তে মিটারের বাজার উন্মুক্ত করে গ্রাহকদের মিটার কেনার স্বাধীনতা দেওয়া উচিৎ। তাতে সব গ্রাহককে মিটার দেয়া সহজ হবে। বিতরণ কোম্পানিগুলোকে এটা নিয়ে অহেতুক গলদঘর্ম হতে হবে না। কিন্তু জ্বালানি খাতে এমন কিছু চক্র রয়েছে যাদের উদ্দেশ্য গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণ কিংবা জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ নয়। তাঁদের উদ্দেশ্য হচ্ছে চুরি-অপচয়ের সুযোগগুলো জিইয়ে রাখা। সেই কারণেই প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে স্থবিরতা।