আরাকানে সংঘাত: দাম কয়েকগুণ বেশি, দেশের জ্বালানি তেল পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে
পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর চলমান সংঘাতে আরাকান রাজ্যে নিত্যপণ্য, জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বাংলাদেশের সঙ্গে দামের বড় পার্থক্যের কারণে মুনাফা লাভের আশায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারী চক্র। সুযোগ বুঝে এ চক্রটি বৈদেশিক মুদ্রায় কেনা জ্বালানি তেল সাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবাধে পাচার করছে মিয়ানমারে।
জাগোনিউজের খবর।
এরইমধ্যে টেকনাফ এবং রামুতে পৃথক চারটি অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার ৩৮৫ লিটার জ্বালানি তেল উদ্ধার করেছে র্যাব। পাচারের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ জনকে। আর লাইসেন্সবিহীন পেট্রোলিয়াম ব্যবসা পরিচালনার দায়ে ছয় প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মিয়ানমারে অনেক দিন ধরেই জ্বালানি তেল পাচার হচ্ছে। কক্সবাজারের কমপক্ষে ২২টি পয়েন্ট দিয়ে নৌকা ও ট্রলারে করে দেশটিতে পাচার হচ্ছে এসব তেল ও পণ্য। তারমধ্যে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, নুনিয়াছড়া, মাঝের ঘাট, খুরুস্কুল, চৌপলদন্ডী, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, সোনারপাড়া, মনখালী, টেকনাফের শাপলাপুর, লম্বরী, মহেষখালীয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, মহেষখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার সমুদ্র উপকুল ব্যবহার করে তেল পাচার করছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
সম্প্রতি পৃথক অভিযানে কয়েক হাজার লিটার জ্বালানি তেলসহ ১০ জনকে আটক করে র্যাব। একইসঙ্গে কক্সবাজার শহরের ফিশারিঘাট, বিআইডব্লিউটিএ ঘাটসহ একাধিক পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে ছয়টি তেলের ডিপো মালিককে দুই লাখেরও বেশি টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসন।
১২ জানুয়ারি কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই হাজার ৯০০ লিটার অকটেনসহ উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনারপাড়ার বাসিন্দা আয়াছ ওরফে রিয়াজ (২২), জসিম উদ্দিন (২০), আলী আকবর (৩৮), মো. সোহেল (১৯), এহাছান উল্লাহ ওরফে রহমত উল্লাহ (২৩) ও রামুর হিমছড়ির বাসিন্দা দেলোয়ার (২৪); ১৬ জানুয়ারি শাহপরীরদ্বীপ এলাকা থেকে এক হাজার ৪১৫ লিটার অকটেনসহ দুজন; ২২ জানুয়ারি টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় ৬৩৮ লিটার অকটেনসহ হাবিবুর রহমান (২২), জাফর আলম (২২) ও নুর হোসেন (৪০), ২৮ জানুয়ারি শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৩২ লিটার অকটেনসহ আরও একজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত আরও দুজন পালিয়ে যান।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) আবু ছালাম চৌধুরী বলেন, র্যাব সবসময় অপরাধীদের ধরতে এবং অপরাধ দমনে কাজ করছে। দেশের সম্পদ যারা বিদেশে পাচার করছেন তারা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পাচাররোধে জেলা প্রশাসন এরইমধ্যে পেট্রোল পাম্প মালিক, ব্যবসায়ী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে। কী পরিমাণ তেল ডিপোতে আসছে, কী পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে তা তদারকি করা হচ্ছে। বৈদেশিক মদ্রায় আমদানি করা তেল কোনোভাবেই ভিনদেশে পাচার করতে দেওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।