আর্ন্তজাতিক বাজারে তেল গ্যাস কয়লার দামে রেকর্ড
রফিকুল বাসার:
আন্তর্জাতিক বাজারে সকল জ্বালানির দাম বাড়ছে। তেল-গ্যাস-কয়লা সব কিছুর দামে রেকর্ড। একদিকে বিভিন্ন দেশে এসব পণ্যেও সংকট অন্যদিকে বাড়তি দাম। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। এই অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকলে করোনা পরবর্তী অর্থনীতি সামলে নেয়ার চেষ্টার গতি কমবে।
করোনাকালে যেভাবে দ্রুত সকল জ্বালানি পণ্যের দাম কমে গিয়েছিল এখন তার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে সব জ্বালানির দাম। করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে যে দাম ছিল তার থেকে বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়েছে। করোনা শুরুর প্রথম দিকে ছিল ৩৭ ডলার। বাংলাদেশে খোলা বাজার থেকে প্রতি মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করতে দিতে হচ্ছে ৩০ ডলারের বেশি। করোনাকালে আমদানি করা হয়েছে ৫ ডলারেরও কম দামে। কয়লার দাম উঠেছে টনপ্রতি ২৪৬ ডলাওে, যা ছিল ৪৬ ডলার।
গত বছরের এপ্রিলে ইতিহাসে প্রথম তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ‘শূন্য’ ডলারেরও নিচে নেমে যায়। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে অপরিশোধিত তেলের দাম চলতি বছরের শেষে ব্যারেল প্রতি ৯০ ডলারে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে টিকা দেয়ার পর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই সংক্রমণ ২ শতাংশের নিচে। এতেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হচ্ছে আর তার সাথে বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা। চাহিদা বাড়ার সাথে বাড়ছে দাম। হচ্ছে সংকট।
প্রায় দেড় বছর কম দামে বিক্রি পুসিয়ে নিতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে উত্তোলক দেশগুলো। সব ধরণের জ্বালানির দাম আরও কিছুদিন উর্দ্ধূমুখিই থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
আগের অবস্থায় ফিরে যেতে থাকা এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে জ্বালানির দাম এত দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন ধাক্কা। স্বাভাবিক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে চীন। তারপর ভারত। এই দুই দেশই গত কয়েকমাস টানা তেল আমদানি বাড়িয়েছে। কয়লা ব্যবহার কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়াচ্ছে তেলের ব্যবহার। আগামী ফেব্রুয়ারিতে চীনে শীতকালীন অলিম্পিক। সেজন্য বেইজিংয়ের দূষণ কমাতে কয়লার ব্যবহার কমানো হচ্ছে। করোনার পর ভারতেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। তাই বেড়েছে তেলের ব্যবহার।
কয়লার মূল্য ঘোষণাকারী এজেন্সি অর্গাস মিডিয়ার ধারণা চলতি বছর ইউরোপে কয়লার চাহিদা বাড়তে পারে। জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও যুক্তরাজ্যের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যদি আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ সক্ষমতায়ও চলে তাহলে চাহিদা বাড়বে। যদিও এসব দেশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে কয়লার ব্যবহার কমাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ইউরোপে। ইউরোপে গ্যাস বিদ্যুতের দাম আরও কিছুদিন বাড়তি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ইতালিতে জ্বালানির দাম বেড়েছে। জার্মানিতে আগামী বছরের জন্য বিদ্যুতের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। ফ্রান্সে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
এ মাসে নেদারল্যান্ডসে ডাচ প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আগের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এই বাড়তি দাম আগামী মাসেও থাকবে। যুক্তরাজ্যেও এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে।
চীনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আসন্ন শীতের জন্য জ্বালানি সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।