আলো দেখলে ভয় লাগে!

‘আগে অন্ধকার দেখলে ভয় লাগতো। এবার বিদ্যুৎ বিল দেখার পর আলো দেখলে ভয় লাগে।’ নিজের ফেইসবুক পেইজে এসএফ আহসান শামীম এমন মন্তব্য করেছেন।
বিদ্যুৎ বিলের অসঙ্গতিতে এমন অবস্থা বেশিরভাগ গ্রাহকের।
আহসান শামীম এর মন্তব্যে সম্মতি জানিয়ে সেলিম শাহেদ বলেন, এটা বাস্তবতা। কর্তৃপক্ষের দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা উচিত। সোনিয়া খান বলেন, ঠিক। সোফিয়া চৌধুরী বলেন, আমারও।
সালেহ আহমেদ লেখেন, ঠিক। সৈয়দা শাহনাজ পারভীন বলেন, কথা খানা মন্দ বলেন নাই।
বিদ্যুৎ বিলের ভোগান্তির একটি চিত্র এটা।সারাজীবন বিল দিয়েছেন একরকম আর হয়ে গেল আর একরকম।
এই জুন মাসেও ভোগান্তি শেষ হয়নি। রাজধানীর উত্তরার এক বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বাসায় তিনি একা থাকছেন। মে মাসে তার বিদ্যুৎ বিল হয়েছে এসেছে ৩২০ টাকা। আর জুন মাসে হয়েছে তিন হাজার টাকা। কী করে এটা হল জানতে চাইলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। শুধু তা সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান।
করোনাকালের নতুন উপদ্রব বা ভোগান্তি বিদ্যুৎ বিল। ২০ টাকার সুবিধা দিতে গিয়ে নেয়া হলো দুই হাজার টাকা।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শোধ না করলে বিলের ৫ শতাংশ করে জরিমানা দিতে হয়। করোনার কারণে ৫ শতাংশ জরিমানা তিন মাসের জন্য মওকুফ করা হয়। অর্থাৎ দেরিতে বিদ্যুৎ বিল দিলেও কোনো জরিমানা দেয়া লাগবে না বলে জানানো হয়। কিন্তু সেই ৫ শতাংশ জরিমানা মওকুফ করে নেয়া হলো মূল বিলের শত গুণ। আর এতেই করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি উবে গেল।
অর্থাৎ কারো যদি একমাসে ৫০০টাকা বিল আসে আর তিনি যথাসময়ে শোধ না করেন তবে ২৫ টাকা জরিমানা হবে। তিন মাসে ৭৫ টাকা মওকুফ করা হয়েছে। কিন্তু তিন মাস পরে তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো অন্তত তিন হাজার টাকা অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার টাকা বেশি।
কেন হল এমন? বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন রকম তথ্য দিচ্ছে এনিয়ে। এজন্য নিজেরা নিজেদের কে দায়ী করে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
তবে এঘটনাকে কোনভাবেই ভুল বলা চলে না, পরিকল্পিতভাবে এই বিল করা হয়েছে। আর এজন্য প্রত্যেক কোম্পানি বা সংস্থা তাদের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে শাস্তি দিয়েছে।
প্রথমেই সতর্ক থাকলে আর এমন হয়তো হতো না।
কয়েকটা কারণে এমন হয়েছে। মার্চ মাস থেকে বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিল বেড়েছে। এনিয়ে কারো আপত্তি নেই। ‌কিন্তু এই বাড়তির বাইরে অনেক বিল করা হয়েছে
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম ৫ থেকে ১০ ভাগ বেড়েছে৷ প্রতিটি ধাপেই এভাবে কম বেশি বেড়েছে৷ এখন আবাসিক বিদ্যুতের দাম- প্রথম ধাপ: ০-৭৫ ইউনিট- ৪.১৯ টাকা; দ্বিতীয় ধাপ: ৭৬-২০০ ইউনিট- ৫.৭২ টাকা; তৃতীয় ধাপ: ২০০-৩০০ ইউনিট-৬.০০ টাকা; চতুর্থ ধাপ: ৩০১-৪০০ ইউনিট- ৬.৩৪ টাকা; পঞ্চম ধাপ: ৪০১-৬০০ ইউনিট- ৯.৯৪ টাকা; ষষ্ঠ ধাপ: ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে- ১১.৪৮ টাকা।
একজন যদি ২০০ ইউনিটের ধাপের গ্রাহক
হয় আর তিন মাসের বিল একসাথে যোগ করা হয় তখন স্বাভাবিকভাবে ৬০০ ইউনিটের ধাপে চলে যাবে। আর তখন বিল হয়ে যাবে দ্বিগুণেরও বেশি । আর সেটা হয়েছে তিন মাসের যোগ করায়। বিদ্যুৎ বিল বেশি দামের ধাপে চলে গেছে। যদিও এটা কাম্য নয়। ঠিক নয়। উচিত নয়।
এ অভিযোগ প্রিপেইড নয় এমন প্রায় সকল গ্রাহকের৷
জনসমাগম এড়াতে যে সুবিধা দেয়া হল তা আরও মানুষকে বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়া কে বাধ্য করে তুলল। বিড়ম্বনায় ফেলল এবং আবার সেই লাইনে দাঁড়াতে হলো। এখন প্রতিদিন অভিযোগ নিয়ে এই করোনার মধ্যেও বিদ্যুৎ অফিসে ভিড় করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, তারা একসঙ্গে তিন মাসের বিল করলেও তা গড় করে প্রতিমাসের ধাপ নির্ধারণ করেছে৷ কিন্তু গ্রাহকদের বিলে সেই ধাপ উল্লেখ করা নেই৷ আর তারা লিখিত অভিযোগ করলেও তাদের ধাপ অনুযায়ী বিল দেখা যায়। মার্চে পর গরম বাড়তে থাকে। এতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ে। এবার করোনা পরিস্থিতিতে অধিকাংশ গ্রাহক বাসায় অবস্থান করায় বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া মার্চ থেকে বিদ্যুতের বর্ধিত বিল কার্যকর হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রাহকের বিলের পরিমাণ বেড়েছে। এরপরও করোনা পরিস্থিতিতে মিটির রিডিং না নিয়ে মার্চ ও এপ্রিলের বিল দেওয়ায় কিছু গ্রাহকের বিল কম-বেশি হয়েছে।
করোনাকালে বিদ্যুতের ‘ভুতুড়ে বিল’ নিয়ে অতিষ্ঠ গ্রাহক। সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযোগ করলেও সমাধান পাচ্ছে না অনেকেই।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে অঊভিযোগ এসেছে ৩৪ হাজার ৬৮১টি। পিডিবির ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জন গ্রাহকের মধ্যে অভিযোগ এসেছে ২ হাজার ৫৮২ জনের। ডিপিডিসির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জনের অভিযোগ এসেছে। ডেসকো’র ১০ লাখ গ্রাহকদের মধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নেসকো’র ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৮ জন গ্রাহকের মধ্যে ২ হাজার ৫২৪ জনের অভিযোগ এসেছে।