ইন্দোনেশিয়ার কয়লা উত্তোলন ও রফতানি ২০২৩ সালে রেকর্ড করেছে। বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোয় ক্রমবর্ধমান চাহিদা এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।
এশিয়ার দেশগুলো এখনো জ্বালানি হিসেবে কয়লার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এর ব্যবহার রোধে এ অঞ্চলের দেশগুলোয় নীতিগত চাপও কম। ব্যাপক মজুদের পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি চাহিদার বড় একটি অংশই পূরণ করে কয়লা। আর এ অঞ্চলের কয়লা চাহিদার সিংহভাগই পূরণ করে ইন্দোনেশিয়া।
মিনাবরা ওয়ান ডাটা ইন্দোনেশিয়ার (এমওডিআই) তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে ইন্দোনেশিয়া ৭৭ কোটি ৫২ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করে, যা সরকারের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ৬৯ কোটি ৪০ লাখ টনেরও বেশি।
বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সমুদ্রপথে কয়লার বৈশ্বিক আমদানি চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেই মূলত ইন্দোনেশিয়ার খনিগুলোয় কয়লা উত্তোলন বাড়ানো হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে উত্তোলন বেড়েছে ১২ শতাংশ। ২০২৪ সালে ৭১ কোটি টন কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ইন্দোনেশিয়া।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কয়লা রফতানিকারক। ২০২৩ সালে দেশটি ৫০ কোটি ৮০ লাখ টন কয়লা রফতানি করে। এর মধ্য দিয়ে রফতানিতেও রেকর্ড স্পর্শ করে খাতটি। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রফতানি হয়েছে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টন, যা অন্যান্য প্রান্তিকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ২০২২ সালে দেশটি রফতানি করেছিল ৪৬ কোটি ২২ লাখ টন।
ইন্দোনেশীয় কয়লার সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার চীন। এর পরই অবস্থান ভারতের। ২০২৩ সালে চীনে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টন কয়লা রফতানি করে ইন্দোনেশিয়া। ভারতে রফতানি করা হয় ১০ কোটি ৮৪ লাখ টন।
ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী আরিফিন তাসরিফ গত বছরের শুরুর দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ডমিস্টিক মার্কেট অবলিগেশন (ডিএমও) নীতির জন্য প্রয়োজন ২১ কোটি ৩০ লাখ টন কয়লা। আর রফতানির জন্য ৫১ কোটি ৮০ লাখ টন।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের দেয়া তথ্যমতে, গত বছর ফ্রি অন বোর্ড চুক্তিতে ৪ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি বা কেজিপ্রতি টন কালিমানতান কয়লার গড় দাম ছিল ৬৩ ডলার ৫ সেন্ট। বছরের শুরুর দিকে এ গ্রেডের কয়লার দাম ছিল ৯০ ডলার। শেষ দিকে এসে তা ৫৮ ডলারে নেমে যায়।
দাম কমার কারণে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে রফতানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি আসে। সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি প্রতি টন কালিমানতান কয়লার দাম ছিল ৫৮ ডলারে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছর খনিগুলো থেকে গত বছরের চেয়ে অন্তত তিন কোটি টন বেশি কয়লা উত্তোলন হবে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) উত্তোলন লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বাড়বে। কারণ এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। এদিকে উত্তোলন বাড়লে স্থানীয় সরবরাহের পাশাপাশি রফতানিও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
ভারতের ব্যবসায়ীরা ইন্দোনেশিয়ার বাজারের ওপর খুব কাছ থেকে নজর রাখছেন। তারাও একই মতামত দিয়েছেন। তারা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও ইস্পাত কারখানাগুলোয় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদাও চলতি বছর কয়লা উত্তোলন বাড়াতে সহায়তা করবে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধের অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চলছে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে বর্তমান বিশ্ব। জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বহুমুখী প্রচেষ্টার পরও কয়লার ব্যবহার বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ফলে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটি ৪০ লাখ টন তাপীয় কয়লা রফতানি হয়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় রফতানি ৬ কোটি ২৫ লাখ টন বা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
গত বছর তাপীয় কয়লা রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ছিল ইন্দোনেশিয়া। বছরজুড়ে দেশটি ৫০ কোটি ৫৪ লাখ টন রফতানি করে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ বা ৫ কোটি ৪০ লাখ টন বেশি। কেপলার জানায়, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক কয়লা রফতানিতে অর্ধেকেরও বেশি অবদান ছিল ইন্দোনেশিয়ার।
– বণিক বার্তা ডেস্ক