উন্নত দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে পরিবর্তন নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক:
উন্নত ও উন্নয়নশীলের দরকষাকষির মধ্যে চলছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। পৃথিবী রক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে উদ্যোগের কথায় একমত সকলে। কিন্তু কাজটা শুরু করবেন কে কিভাবে কোথা থেকে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন কার্যক্রম তেমন নেই।
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর আলোচনার সময় উন্নত দেশগুলো একদিকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্যদিকে অর্থনৈতিক আলোচনার সময় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলছেন। উন্নত কয়েকটি দেশ আগামী কয়েক বছর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
আগের ধারাবাহিকতায় এখনও বিশ্বনেতারা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই যাচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এগুলো শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই থেকেছে। বাস্তবায়ন খুবই সামান্য।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে উন্নত দেশগুলো জ্বালানি পরিবর্তনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে তহবিল আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর আগের যে ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিলের কথা বলা হয়েছিল তাই এখনও দেয়া হয়নি। নতুন কওে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে ২০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
প্যারিস চুক্তি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার যে দেয়ার প্রতিশ্রুতি তাও দেয়নি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের যে পথনকশা করেছিল তাও বাস্তবায়ন করেনি উন্নত দেশগুলো।
আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা আদৌ করা হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বেড়েছে সত্য। প্রত্যেক দেশেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করছে। উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি মোতাবেক করছে। কিন্তু একই তালে যে পরিমাণ ফসিল জ্বালানি ব্যবহার কমানোর কথা তা কেউ করেনি। বরং গ্যাস, তেল, কয়লা ব্যবহার প্রত্যেক বছর বাড়ছে। আর এই বাড়ার হার উন্নত দেশে বেশি।
জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিদেশে অর্থায়ন বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। তবে নিজেদের দেশে কি করবে সে বিষয়ে কিছু বলেনি।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ কয়লার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে।
অক্টোবরে প্রকাশ করা জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) ‘প্রোডাকশন গ্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়াসহ ১৫টি উন্নত দেশ তেল ও গ্যাসের উত্তোলন দ্বিগুণের বেশি বাড়াবে। আগের চেয়ে ১১০% উৎপাদন বাড়াবে তারা। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখা সম্ভব নয়।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ায় পৃথিবী দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে। জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে উন্নত দেশগুলো ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে না বাড়ে, সে ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। এটাই প্যারিস চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে কার্বণ নিঃসরণ কমাতে সম্মত হয়েছিল।