উন্নয়ন সহযোগীদের বলবো হাত বাড়ান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বার্তা২৪.কম:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো আমাদের দায় নয়, তবুও উদ্যোগ নিয়েছি। উন্নয়ন সহযোগীদের বলবো বাংলাদেশ চেষ্টা করছে, হাত বাড়ালে আরও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিতে পারবো।

বুধবার (২২ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ২৪তম ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি কনফারেন্স অ্যান্ড গ্রিন এক্সপো-২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি এবং গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনে প্রদশর্নীর পাশাপাশি থাকছে ৪টি টেকনিক্যাল সেমিনার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী প্রতিকূলতার মুখোমুখি। প্রতিবছর সমুদ্রের উচ্চতা দশমিক ৭৩ ইঞ্চি বাড়ছে। বাংলাদেশ অংশে আরও বেশি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতো আমার চোখে দেখা। জোয়ারের পানি এখন চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকায় ঢুকছে। পাকিস্তানে বন্যা দেখছি, আগে সেখানে বন্যা হতো না। আমাদের দেশের সাইক্লোন ও ঘূর্ণিঝড় আরও বেড়েছে, হচ্ছে অতিমাত্রায়। এর জন্য ৮০ শতাংশ দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। বহু বছর ধরে আলোচনা করে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি করা হয়। সব প্রতিশ্রুতি যদি বাস্তবায়ন হয়, কার্বন নিঃসরণ যদি কমানো যায়, তাহলেও ৩ শতাংশ বাড়বে। এখনই ত্রাহি অবস্থা ৩ শতাংশ বাড়লে কি দাঁড়াবে।

মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর গড় কার্বন নিঃসরণ ৬ দশমিক ৭৯ মেট্রিক টন। আর যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ দশমিক ৯ মেট্রিক টন, চীন ১০ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন। আর আমাদের মাত্র ১ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন। কিছু দেশ জিরো নিঃসরণে গেছে।

বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের পলিসির পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। নীতিমালায় বলা হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে হলে প্রতি মেগাওয়াটের জন্য ৩ একর জমি দেখাতে হবে, কিন্তু ১ দশমিক ৬ একরে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অবশ্যই এই নীতিমালা পরিবর্তন করা দরকার।

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এমন অসামঞ্জস্য নীতি থাকতে পারে না। আমি শক্তভাবে এর নীতিমালা পরিবর্তন চাই। আবার লিড পার্টনার নিয়েও অংসঙ্গতি রয়েছে।

তিনি বলের, এক সময় ট্রানজিট শব্দটি গালি ছিলো, এখন সেটা পরিবর্তন এসেছে। আমরা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনবো ভারতের ওপর দিয়ে, হাইড্রোজেন চালিত বাস আনার কথা ভাবছে বিআরটিসি। আমরা প্রথম শিল্প বিপ্লবে একশ’ বছর, দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবে ৮০ বছর, তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে ৩০ বছর পেছনে ছিলাম। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে একসঙ্গে পা রেখেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশসহ ৫২টি দেশ কার্বন নিঃসরণের জন্য ভিকটিম, কিন্তু এ দেশগুলো এর জন্য দায়ী নয়। যেসব দেশ দায়ী তারা একটি প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেনি। উষ্ণতা কমাতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরনির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে পরিবর্তন দরকার, আমরা করতে চাই। আমাদের তরুণদের প্রস্তুত করতে হবে বিশ্ববাজারের উপযোগী করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয় মো. আখতার হোসেন বলেন, এসডিজিতে বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে।র‌্যাংকিংয়ে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ১০১তম আর ভারতের র‌্যাংকিং ১১২তম।

স্রেডার চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা বলেন, সৌর বিদ্যুতে জমির ঘাটতি রয়েছে। বায়ু বিদ্যুতে এখন অনসোরে কাজ করছি। অফসোর নিয়ে সমীক্ষা চলছে, রিপোর্ট পেলে অফসোরের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সৌর বিদ্যুৎ শতভাগ নিরবিচ্ছিন্ন এ কথা বলা যাচ্ছে না। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি কনভেনশনাল বিদ্যুতের সমন্বয় থাকতে হবে। আমাদের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি রয়েছে। জেনারেশন ক্যাপাসিটি থাকার পরও কাঁচামালের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২টিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অর্থের অভাবে চাহিদামতো এলএনজি আমদানি করতে পারছি না। এজন্য আমাদের যা আছে তার সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

ইডকলের সিইও আলমগীর মোর্শেদ বলেন, এসডিজিতে ঘোষণা করেছি। নিজেদের অর্থায়ন দিয়ে ৫-৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে চাই। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়বে। প্রযুক্তি রয়েছে এখন প্রয়োজন অর্থায়ন, বারবার প্রশ্ন আসছে কিভাবে। বিমা কোম্পানি, শেয়ারবাজারকে কিভাবে যুক্ত করা যায় সেভাবে মডেল তৈরি করা জরুরি।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন (বিএসআরইএ) সভাপতি নুরুল আক্তার বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারলে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। এখানে সচেতনতার অভাব রয়েছে, সৌর বিদ্যুতে বিনিয়োগ না হলেও চলে, আবার রক্ষণাবেক্ষণ নেই বললেই চলে। এসব বিষয়ে জনগণকে সেভাবে সচেতন করা যায়নি। বাণিজ্যিক ব্যাংককে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। ১৫ লাখ সেচ পাম্প রিপ্লেস করা গেলে ৩০ শতাংশ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত। তিনি বলেন, ২০২১ সাল বাদ দিলে গত ৫ বছরে গ্রিন অর্থায়নের হার বাড়ছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে একটি সেমিস্টার থাকা উচিত। যাতে যারা চাকরিজীবী রয়েছে তারা এখানে এসে জ্ঞান আহরণ করতে পারেন।

তিনি বলেন, সৌর বিদ্যুতে সোলার প্যানেল, ইনভার্টার আমদানি করি, এখানে ট্যাক্সেশনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জির ডিরেক্টর ড.এসএম নাফিজ সামস, গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের সিইও অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর লুৎফর রহমান।