উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সাফল্য উদযাপন
স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে বর্তমান সরকারের ঐতিহাসিক সাফল্য শোভাযাত্রা, আনন্দর্যালি, লেজার শো, আতশবাজি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে উদযাপন করেছে সর্বস্তরের জনগণ।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
একই সাথে ঐতিহাসিক এ সাফল্যে অজর্ন করায় আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শোভাযাত্রা বের করা হয়। বাদ্যযন্ত্রের তালে উচ্ছ্বসিত জনতার শোভাযাত্রায় রাজধানী রূপ নিয়েছিল উৎসবের নগরীতে। এসব শোভাযাত্রা গিয়ে মিলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে।
এ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে শুরু হয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ আয়োজন। এরপর ছিলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনা। আয়োজনের মধ্যে বাঁশি, ঢাক-ঢোলের বাদ্য, মঙ্গলযাত্রা, লাঠি খেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আচার-সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি গ্যালারিতে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে আয়োজনের মূল পর্ব শুরু হয়। এরপর দেখানো হয় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের পথপরিক্রমার ওপর করা তথ্যচিত্র। অগ্রযাত্রার স্বীকৃতির উদযাপন স্টেডিয়ামে বসে প্রধানমন্ত্রী উপভোগ করেন।
এ সময়ে শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। এরপর জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
এলডিসি থেকে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ উত্তরণ প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যদিয়ে সরকার দেশব্যাপী এই উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
দুপুর ২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের আশে পাশের এলাকায় সমবেত হতে থাকেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, পরিদপ্তর ও সংগঠনের ব্যক্তিরা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানটি সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বাংলাদেশের এমন অর্জনে সবার মাঝে দারুণ উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে উচ্চারিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ধ্বনি। অনেকের মাথায় দেখা যায় লাল-সবুজের ক্যাপ, গায়ে টি-শার্ট, হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড। যেখানে লেখা ছিল ‘হাতে রেখে হাত, উন্নয়নের ডাক’, ‘স্বপ্ন পূরণের উৎসবে আজ বাংলাদেশ’, ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’, ‘স্বপ্নের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ আজ হাসছে সুখী মানুষের প্রাণস্পন্দনে দেশ ভাসছে’ ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার, গতিরোধ করার সাধ্য কার’ ইত্যাদি স্লোগান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৃথক পৃথক শোভাযাত্রা করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। তবে শিল্পকলা একাডেমির শোভাযাত্রা ছিলো চোখে পরার মতো।
সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বর্ণিল সব ব্যানার-ফেস্টুন, হাতে জাতীয় পতাকা, ঢাক-ঢোল, হাতি, ঘোড়ার গাড়ি, নৗকার গাড়ি, একতারা, সারিন্দা, বাশি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করে।
শোভাযাত্রায় নারী-পুরুষ সব বয়সী মানুষের চোখে মুখে উচ্ছ্বাসের ছাপ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে নানা প্ল্যাকার্ড চোখে পড়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে।
মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ সংস্থার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় ছিল সুসজ্জিত বাদকদল। শোভাযাত্রার বিশাল ব্যানার নিয়ে গায়ে বর্ণিল টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে হাতে শোভা পায় ফেস্টুন। টি-শার্টে, ব্যানারে স্লোগান- ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।’
এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এই উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) আয়োজনে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সভাপতিত্ব করেন। এ সময়ে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফজিতা ম্যানুয়েল কাতুয়া ইউতাউ কমন বক্তৃতা করেন। এউএনডিপি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আসীম স্টেইনারের একটি লিখিত বার্তাও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তোরণের সুপারিশপত্রের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন। এরপর একটি ৭০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তরানা হালিম, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল মালেক এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বেগম কামরুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৭০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির একটি ফটো অ্যালবাম তুলে দেন।
এরপরই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, কেন্দ্রীয় ১৪-দল, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, পুলিশ বাহিনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী সমাজ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী সমাজ, সাংবাদিক সমাজ, কবি ও সাহিত্যিকরা, শিল্পী সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, মহিলা সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধিদল, ক্রীড়াবিদ, শিশু প্রতিনিধিদল (স্কাউট, গালর্স গাইড, বিএনসিসি), প্রতিবন্ধী প্রতিনিধিদল, শ্রমজীবী সংগঠন এবং মেধাবী তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জনের ঐতিহাসিক সাফল্যে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আনন্দ শোভাযাত্রা, মানববন্ধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।