উন্নয়ন বিরোধী নই, তবে যে উন্নয়নে দেশের ক্ষতি হয় তার প্রতিবাদ করবো

আমরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে না। তবে যে উন্নয়ন মানুষের ক্ষতি করে, দেশের ক্ষতি করে, যে উন্নয়ন দেশের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ডেকে আনে আমরা সে উন্নয়নের প্রতিবাদ করবো।
উন্নয়ন বিরোধীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা জানান।
‘রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয়ক সর্বশেষ পরিস্থিতি : নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়া’ প্রকাশার্থে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে ‘সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি’।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অ্ধ্যাপক এম এম আকাশ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) আবদুল মতিন, শরীফ জামিল, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান প্রমুখ।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে লিখিত বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী রামপাল বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি তার বক্তব্যে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকে ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, মনগড়া, নেতিবাচক ও ভীতি সৃষ্টিকর বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা নাগরিকদের আন্দোলনের সঙ্গে এ বিষয়ে বিএনপির সাম্প্রতিক অবস্থানকে সম্পৃক্ত করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমাদের এ আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। সব সময়ই ক্ষমতাসীন সরকার তাদের কার্যক্রমের সমালোচনাকে ঢালাওভাবে ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। কানসাট এবং ফুলবাড়ীর সফল আন্দোলন প্রমাণ করেছে ক্ষমতাসীনদের এমন দোষারোপ সঠিক নয়, ভ্রান্ত।’

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘আমরা নিশ্চিত সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের আন্দোলনের বিজয়ই প্রমাণ করবে যে ক্ষমতার জোরে অগ্রহণযোগ্য উন্নয়ন চাপিয়ে দেয়া যায় না এবং এমন চেষ্টা সফলও হয় না। আজকের ফারাক্কা ব্যারাজ পরিস্থিতি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।

সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্দরবনকে রক্ষা করা এবং যে কোনো ঝুঁকি থেকে এ বিরল প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখা। শুধু পরিবেশগত বিবেচনায় নয়, অর্থনৈতিক বিবেচনাতেও রামপাল প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।

রামপালের স্বপক্ষে অর্থনৈতিক যুক্তি দেখাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রামপালে নিযুক্ত কোম্পানি সিএসআর বাবদ ৩০ কোটি টাকা জমা দেবে বলে উল্লেখ করেছেন। অমূল্য সুন্দরবনের বিপরীতে এ ৩০ কোটি টাকা অতি নগণ্য।
সংবাদ সম্মেলনে খুশী কবির বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে বক্তব্যের জন্য তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যগুলোর যুক্তি প্রদান করলে দেশবাসী সঠিক উপলব্দি লাভ করতে পারতো। একটি পক্ষ হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের তথ্য ও যুক্তিগুলোও বিবেচনায় নেবেন এবং রামপাল বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন।

অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, দেশ বিদেশের বিভিন্ন সমীক্ষায় বলা হয়েছে রামপাল প্রকল্পটি ঝুকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও সামাজিকদিক বিবেচনায় নিলে এটি কখনই দেশের জন্য কোন সূফল বয়ে আনবে না।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আমরা রাজনীতি করতে আন্দোলন করছি না। তাছাড়া আমাদের আন্দোলনকে ঘিরে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করুক, সেটাও আমাদের কাম্য নয়। আমরা শুধুমাত্র সুন্দরবনের স্বার্থে কথা বলছি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে দুই পক্ষের যুক্তিগুলোই বিবেচনা করবেন। আমরা কেন রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধীতা করছি, সেই সঠিক তথ্যটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবহিত হলে আমরা আশাবাদী রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটিই অবশ্যই বাতিল করতে পদক্ষেপ নেবেন।