উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাটি পুরো ফাঁকা করে কয়লা তুলে আনা হবে। আপাতত বড়পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্রর উত্তরাংশে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হবে। উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার জন্য সেখানের মাটি ও পানির জরিপ চলছে। জরিপের পর মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা ঠিক করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তরাংশে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে। খনি খননের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দরপত্র আহবান করা হবে। এক দিকে কয়লা উত্তোলন চলবে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলবে। কয়লা তোলার সাথে সাথে যেন বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়, এই লক্ষে কাজ হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও এ খনি থেকে পাঁচ বছর পর কয়লা তোলা সম্ভব হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবিষয়ে জানান, বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার বিষয়ে মাটি ও পানি জরিপের কাজ চলছে। এই জরিপের প্রতিবেদন আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পাওয়া যাবে। প্রতিবেদনের আলোকে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়লানীতি চুড়ান্ত করা হবে। একই সাথে করা হবে জাতীয় জ্বালানি নীতি। উম্মুক্ত পদ্ধতিতে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। জমি অধিগ্রহনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ভূগভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হয়। মাটির নিচে সুড়ঙ করে এই কয়লা তোলা হচ্ছে। অন্য যে চারটি কয়লা খনি আছে সেখান থেকে কোন কয়লা তোলা হয়নি।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্রিউএম) বিভাগ বড়পুকুরিয়ার পানি ও মাটির ধরণ জরিপের কাজ করছে। মাটিতে পানির অবস্থান, মাটির পুরুত্ব, মাটি উম্মুক্ত করা হলে কি পরিমান পানি আসবে, সে পানি কিভাবে ব্যবহার করা হবে, পানি বের হয়ে আসলে আরো উত্তরের প্রচলিত ফসলের কি পরিস্থিতি হবে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজে কিভাবে পানি ব্যবহার হবে ইত্যাদি বিষয় জরিপ চলছে।
এরআগে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে বিভিন্ন সময় দেশে আন্দোলন হয়েছে। বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া কয়লা খনি উম্মুক্ত পদ্ধতিতে করার বিরোধীতা করে এলাকাবাসী আন্দোলন করেছে। এখনও মাঝে মাঝে খনি উন্নয়নের পক্ষে বিপক্ষে সমাবেশ হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ি, আগামী দশ বছর পর বছরে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া থেকে বছরে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন কয়লা তোলা হচ্ছে। প্রায় দশগুন বেশি কয়লা প্রয়োজন হবে।
সুত্র জানায়, বাড়তি চাহিদা মেটাতে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে অনেক বেশি কয়লা তোলা যাবে। মাটির নিচে থাকা কয়লার প্রায় ৯৫ ভাগ তুলে আনা যাবে। কিন্তু ভূগভস্থ পদ্ধতিতে করলে ২৫ থেকে ৩০ ভাগের বেশ তোলা যাবে। ২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়নে কয়লা থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। দেশীয় ও আমদানি করা কয়লা দিয়ে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এরজন্য বছরে ১০ মেট্রিক টন কয়লা দেশীয়ভাবে সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশের কোন খনিতে কোন পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যায় তা সুপারিশ করার জন্য একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছিল। ২০১২ সালে এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ফুলবাড়িয়া ও বড়পুকুরিয়ায় উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করার সুপারিশ করে। এছাড়া খালাশপির ও দিঘিপাড়ায় ভূগভস্থ এবং জামালগঞ্জে গ্যাসিফিকেশন করার সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুলবাড়ি ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তরাংশে সম্ভাব্যতা যাচাই করে যদি উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন সম্ভব হয় তাহলে তাইই করা উচিত। কারণ এই দুটি খনির কয়লা ভূমি থেকে ২০০ মিটার নিচে। এ খনি দু’টো থেকে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা গেলে বেশি কয়লা পাওয়া যাবে। এই কয়লার কারণে যে অর্থনৈতিক লাভ হবে তা দিয়ে ওই এলাকার জনগণের পুনর্বাসনও সম্ভব। অন্য খনিগুলোর গভীরতা বেশি বলে সেক্ষেত্রে ভূগভস্থ পদ্ধতিতেই করা উচিত।
সুপারিশে যা বলা হয়, বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে এখনই পরীক্ষা মূলকভাবে করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই জরুরী। ফুলবাড়িয়া খনিতে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে করানো গবেষণা ঠিক ছিল। তবে ফুলবাড়িয়ায় উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রয়োজন। খালাসপীর কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে কিনা তা দেখা এবং ভূগভস্থ খনি উপযুক্ত হলে সেখান থেকে দ্রুত কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। দিঘিপাড়া ও জামালগঞ্জ খনির ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা করে ভূগভস্থ খনির সুপারিশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে এই দুই ক্ষেত্রে কোল বেইজ মেথড (সিবিএম) এবং আন্ডারগ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশন (ইউসিজি) পদ্ধতি করা যায় কিনা তাও যাচাই করা এবং কয়লা উত্তোলনের জন্য পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন সেন্টারের (আইআইএফসি) হিসেবে, দেশে বর্তমানে পাঁচটি ক্ষেত্রে মোট ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ টন কয়লা মজুদ আছে। এরমধ্যে উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ১২৫ কোটি টন।