এক আইডিয়াতে বাজিমাত!
বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য খুঁটিতে বসানো হয়েছে ট্রান্সফরমার। কিন্তু এর নিদিষ্ট কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এই নিরাপত্তা ঘাটতির সুযোগে কিছু অসাধু লোক ট্রান্সফরমারের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি চুরি করছে। এখানে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা যেতে পারে যাতে সেন্সর সিস্টেম থাকবে। নির্ধারিত সীমার মধ্যে কেউ আসলে সয়ংক্রিয় বার্তা চলে যাবে পুলিশ বা কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়াও ট্রান্সফরমার অতিরিক্ত গরম হলে বা তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রন এবং মেরামতের দরকার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা চলে যাবে।
এটা একটা উদ্ভাবনি চিন্তা। এক ছাত্রের চিন্তা। উদ্ভাবনী শক্তি ও চিন্তা নিয়ে ‘এক আইডিয়াতে বাজিমাত’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। এতে ট্রান্সফরমারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষন বিষয়ে নতুন চিন্তা নিয়ে হাজির হয়েছিল ফজলে ইলাহী। তার চিন্তা প্রথম হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য সোলার স্কুল ব্যাগ, শৈবাল থেকে বায়োগ্যাস তৈরির মতো নানা চিন্তা নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে হাজির হয়েছিল দেশের মেধাবী ও উৎসাহী তরুণরা। তারই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চিন্তা সংগ্রহ করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, জানুয়ারি পর্যন্ত ‘এক আইডিয়াতে বাজিমাত’ শীর্ষক উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় সারাদেশ নিয়ে একশ চিন্তা বাছাই করা হয়। এরপর ‘আইডিয়া বুট ক্যাম্প’ এর মাধ্যমে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরাসরি তাদের চিন্তা প্রদর্শন করে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, তারুণ্যের অমিত শক্তিই বাংলাদেশকে উন্নত করবে। তরুণদের মানষিকভাবে এখনই প্রস্তুত করতে চাই। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র, গ্যাসক্ষেত্র, কয়লা বা পাথর খনি নিজের চোখে দেখলে স্বচ্ছ ধারণা পাবে। তরুণদের উদ্ভাবনীগুলো যথাযথভাবে অর্থায়ন ও পৃঠপোষকতা করার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ এনার্জি এন্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিল এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ( স্রেডা) নিদের্শ দেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রথম রানার্স আপ হয়েছেন ‘ সৌর স্কুল ব্যাগ’র জন্য তাজিদুল ইসলাম। তারমতে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৬৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। এতে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় শিক্ষার্থীরা। এই সমস্যা দূর করতে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এবং বিকল্প হারিকেন তৈরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যা ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রাতে পড়ালেখার জন্য আলোর অভাব দূর হবে। ব্যবস্থাটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য ‘সোলার স্কুল ব্যাগ’ তৈরি করা যেতে পারে। যার সঙ্গে যুক্ত থাকবে রিচার্জেবল ব্যাটারি। শিক্ষার্থীরা যখন স্কুলে যাবে তখন ব্যাটারি সূর্যের আলোয় রিচার্জ হবে এবং রাতের বেলায় ব্যাগের সঙ্গে লাগানো লাইট জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে পারবে। দ্বিতীয় রানার্স আপ হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল জাহিদ ও তার দল। তারা ‘শৈবাল থেকে জ্বালানি উৎপাদনের মডেল তৈরি করেছেন। আব্দুল্লাহ আল জাহিদ জানায়, প্রচলিত শক্তির উৎসগুলোর মধ্যে শৈবাল সব থেকে কার্যকারী। কারণ শৈবালের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি, উৎপাদনে কম জায়গা লাগে, কার্বন ডাইজেস্ট করে, দ্রুত বেড়ে উঠতে সক্ষম এবং এতে তৈল উপাদানের আধিক্য আছে। শৈবাল প্রাকৃতিক ভাবেই সহজলভ্য এবং এই বায়ো-ফুয়েল তৈরিতে যে সকল সরঞ্জাম ও পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা খুবই সাধারণ। জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানির উপর চাপ কমাতে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রাজিল, কানাডা, ইতালি ও জাপানের মত উন্নত দেশ এরইমধ্যে এই ধরনের শৈবালের ব্যবহার শুরু করেছে। জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানির তুলনায় শৈবাল থেকে উৎপন্ন এই বায়ো-ফুয়েল অনেক সস্তা এবং নবায়নযোগ্য। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ও এর পরিবেশ এই শৈবাল ভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদনের সম্পূর্ণ অনুকূলে।
প্রথম আইডিয়ার জন্য এক লাখ, দ্বিতীয়র জন্য ৫০ হাজার এবং তৃতীয় আইডিয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এই পুরস্কার দেন।