এখন বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ঝুঁকিপূর্ণ

উৎপাদন ও চাহিদার সমন্বয় না হলে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ঝূঁকিপূর্ন হবে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি উঠা নামা করে বলে এই ঝুঁকি আরও বেশি। এর কারণে উৎপাদন খরচও বেশি হচ্ছে। বর্তমান চাহিদা রেখায় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ঝুঁকিপূর্ণ । সর্বনিম্ন চাহিদা না বাড়ালে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করাও ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, বাংলাদেশে শীতের সময় ভোরবেলা বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সব থেকে কম। এই সময় প্রয়োজন হয় মাত্র আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই অল্প চাহিদার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন সমন্বয় খুবই জরুরী। অল্প চাহিদার সময় এক কেন্দ্র থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন উচিত নয়। এক কেন্দ্র থেকে অথবা যে কোন একটি উৎস থেকে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে গ্রিড বিপর্যয়ের ঝুঁকি থাকে। এজন্য বড় বড় একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার সাথে সাথে বেজ লোড অর্থাৎ সব থেকে কম চাহিদার পরিমান আরও বাড়াতে হবে। এই চাহিদার পরিমান আরও না বাড়ালে পুরো গ্রিড ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে। বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও তা পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারবে না। আর যখন পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করা যাবে না তখন উৎপাদন খরচও বাড়বে। এজন্য স্থায়ী বড় বিদ্যুতের গ্রাহক বাড়াতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলীরা বাংলাদেশে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসার আগেই দেশের সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিক করার শর্ত দিয়েছে। দেশের পুরো বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিক না হলে পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা গ্রিডে সঞ্চালন সম্ভব নয়। একই সাথে দেশের মোট চাহিদাও বাড়াতে হবে। বর্তমান যে চাহিদা আছে এই চাহিদায় এক হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্র উৎপাদনে রাখা সম্ভব নয়। সব সময় মোট চাহিদার ১০ ভাগের কম থাকতে হবে পারমানবিক কেন্দ্রর উৎপাদন। পাবনায় এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ইউনিটের কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ একটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৫০০ মেগাওয়াট।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের চাহিদা আরও বাড়বে। এই সময়ের মধ্যে শিল্পসহ বড় গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে। তখন এই সমস্যা থাকবে না।
পিডিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলমগীর কবীর বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় জরুরী। কোন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রর একক উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকা উচিত নয়। একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রর উৎপাদন ক্ষমতা এককভাবে বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ একটি কেন্দ্র থেকে মোট উৎপাদনের ১০ ভাগের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া ঠিক নয়। একক কেন্দ্র থেকে মোট উৎপাদনের ১০ ভাগের বেশি উৎপাদন হলে তা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
পিডিবি’র এক কর্মকর্তা জানান. বাংলাদেশে বেজ লোড কম বলে এক সাথে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সম্ভব হয়নি। পারমানবিক কেন্দ্রসহ কয়লাভিত্তিক কয়েকটি কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিটির ৬৬০ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতার কেন্দ্র আছে ৪৫০ মেগাওয়াটের। ২০২১ সালের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে। এসব কেন্দ্র উৎপাদনে আনার আগে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময়েরও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। না হলে টানা ২৪ ঘন্টা একই ক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারবে না। আর ক্ষমতার পুরোটা উৎপাদন করতে না পারলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে সন্ধ্যায় সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। গরমের সময় সন্ধ্যার চাহিদা মেটানো যায় না। পিডিবি’র হিসাব অনুযায়ি এই মুহুর্তে গরমের সময় সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা আছে সাত হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু শীতের সময় চাহিদা কম থাকে। বিশেষ করে শীতের সকালে চাহিদা অনেক কম থাকে। সকাল থেকে আস্তে আস্তে চাহিদা বাড়তে থাকে। পরে সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরী হয়। আবার রাত ১১টার পরে চাহিদা কমতে থাকে। এ থেকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এবং বৈদ্যুতিক আলোর জন্যই বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে থাকে। আর বেশি শিল্প হলে এবং বেশি চাহিদার গ্রাহক তৈরী না হলে এই সমস্যা সমাধান হবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বর্তন এক কর্মকর্তা বলেন, যখন পরিকল্পনার সব কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে তখন এই সমস্যা থাকবে না। ইতিমধ্যে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়েছে। ঠিকমত বিদ্যুৎ দেয়া যায় না বলে অনেকে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।