এলএনজি ও কয়লার দাম বাড়ছে: দীর্ঘমেয়াদে সুবিধায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি

বঙ্গপোসাগরে ভাসমান তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তর জাহাজ

ইবি ডেস্ক/বণিক বার্তা:

এশিয়ার বাজারে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও কয়লার দাম সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাড়ছে। চাহিদা বাড়তি থাকায় এর দাম বাড়ছে। কয়লা ও এলএনজির দাম বাড়ায় দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
এশিয়ায় এলএনজির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। শীত মৌসুমে প্রতি ১০ লাখ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের (বিটিইউ) দাম ছিল ৫ ডলার ৬০ সেন্ট। সম্প্রতি হয়েছে ১০ ডলার ৯৫ সেন্ট।
চলতি বছরের মে মাসে এশিয়া অঞ্চলের বন্দরগুলোতে ২ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন এলএনজি খালাস করা হয়েছে। এপ্রিলে খালাস করা হয় ২ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার টন। এছাড়া গত বছরের মে মাসে খালাস করা হয় ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ মাসিক ও বার্ষিক উভয় হিসেবেই এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে এশিয়ার দেশগুলো।
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্থা সিএসআইআরও এবং দেশটির জ্বালানি পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াটের জন্য খরচ হয় ৪ হাজার ৪৫০ ডলার। গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ ১ হাজার ৮০১ ডলার। একই পরিমান সৌরতে উৎপাদনে খরচ ১ হাজার ৪০৮ ডলার। বায়ু বিদ্যুতে খরচ ১ হাজার ৯৫১ ডলার।
এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ নেই। পরিচালনার জন্য বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। ফলে কয়লা ও গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় এটি সাশ্রয়ী। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কার্বণ নিসঃরণের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাবও তৈরি করবে না।

“কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াটের জন্য খরচ হয় ৪ হাজার ৪৫০ ডলার। গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ ১ হাজার ৮০১ ডলার। একই পরিমান সৌরতে উৎপাদনে খরচ ১ হাজার ৪০৮ ডলার। বায়ু বিদ্যুতে খরচ ১ হাজার ৯৫১ ডলার।”

এপ্রিলে চীন ৬৫ লাখ ২০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছে। মে মাসে আমদানি বেড়ে হয়েছে ৭৩ লাখ ১০ হাজার টনে। যা চলতি বছরের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। দেশটি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। ওই সময় আমদানি করা হয়েছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার টন এলএনজি।
এলএনজির পাশাপাশি কয়লার দামও বাড়াতে সহায়তা করেছে চীন। যদিও চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির কয়লা আমদানি কমেছে।
চীনের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে সব মিলিয়ে ২ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টন কয়লা আমদানি করেছিল। মে মাসে আমদানি কমে ২ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার টনে নেমে যায়। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটি মোট ১১ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টন কয়লা আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কম।
বিশ্বের শীর্ষ কয়লা আমদানিকারক দেশ চীন। দেশটি কয়লা আমদানি কমিয়ে দেয়ায় এশিয়ার বাজারে বড় প্রভাব পড়তে পারে। তবে বাজার চাঙ্গা রাখার কৌশল হিসেবেই দেশটি আমদানি কমিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বের কয়লা সরবরাহকারী অন্যতম দেশ ইন্দোনেশিয়ার পরই অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান। দেশটি থেকে কয়লা আমদানিতে চীনের অপ্রাতিষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে চীন কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়াকে বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ দুটি তাদের কয়লার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম বাড়িয়ে দেয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ কয়লা আমদানিকারক দেশ ভারত ইন্দোনেশিয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পরিবর্তে দেশটি অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করছে। পাশাপাশি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার উন্নত মানের কয়লার চাহিদা বেড়েছে। মূলত এসব কারণেই এশিয়ার বাজারে কয়লার দাম আকাশচুম্বী।
পণ্যের মূল নিরূপণকারী সংস্থা আরগাস জানায়, ৪ঠা জুন নিউক্যাসল বন্দরে অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ মানসম্পন্ন কয়লার দাম এক দশকের শীর্ষে উঠে আসে। এ সময় জ্বালানি পণ্যটির টনপ্রতি মূল্য বেড়ে ১২১ ডলার ৪৮ সেন্টে দাঁড়ায়। গত বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে তিনগুণ। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার নিম্নমানের কয়লার দামও লক্ষণীয় হারে বেড়েছে। জুনের শুরুর দিকে পণ্যটির দাম গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৪৩ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ৫৫ ডলার ৪ সেন্টে উন্নীত হয়।
এলএনজি ও কয়লার এমন মূল্যবৃদ্ধি উত্তোলক দেশগুলোর জন্য খুশির সংবাদ বয়ে এনেছে। মহামারীর ধাক্কায় যে লোকসানের মুখে পড়েছিল, তা পুষিয়ে নিচ্ছে এসব দেশ। তবে বিশ্বজুড়ে কার্বণ নিসঃরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কমছে কয়লাসহ অপরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার। বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি।