এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ছয় মাসের সর্বনিম্নে

বঙ্গপোসাগরে ভাসমান তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তর জাহাজ

এশিয়ার স্পট মার্কেটে এখনো ছয় মাসের সর্বনিম্ন দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বেচাকেনা হচ্ছে।

এশিয়ার স্পট মার্কেটে এখনো ছয় মাসের সর্বনিম্ন দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা জানান, এর পেছনে ভূমিকা রাখছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ। বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানি পণ্যের চাহিদা কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে দামে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।

শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় মে মাসের সরবরাহ চুক্তিতে গত সপ্তাহে এলএনজির গড় দাম ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩ ডলার, যা গত ১১ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন। আগের সপ্তাহেও একই দামে পণ্যটি বেচাকেনা হয়েছে।

ইন্টেলিজেন্স ফার্ম আইসিআইএসের সিনিয়র এলএনজি অ্যানালিস্ট অ্যালেক্স ফ্রোলি বলেন, ‘বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক ধীরগতির ঝুঁকি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শেয়ারবাজারের ধস ও সম্ভাব্য মন্দার শঙ্কায় জ্বালানির চাহিদাও কমতে পারে।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। চীন শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক দেশ চীন। ব্রেইনচাইল্ড কমোডিটি ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক ক্লাস ডোজেমান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি চীনের জন্য সহায়ক নয়। এমনকি ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের জন্যও এটি উদ্বেগের। বেশির ভাগ বিশ্লেষকই মনে করেন, এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শিল্প উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, ফলে এলএনজির চাহিদা আরো কমতে পারে।’

অ্যালেক্স ফ্রোলি জানান, এর আগেও ট্রাম্পের শুল্ক যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে এলএনজি প্রবাহে প্রভাব ফেলেছে। এমনকি ৬ ফেব্রুয়ারির পর থেকে চীনে কোনো মার্কিন এলএনজি কার্গো পৌঁছায়নি।

এদিকে ইউরোপের ডাচ ও ব্রিটিশ প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম শুক্রবার বিকালে তীব্র দরপতনের মুখোমুখি হয়। গত ছয় মাসের সর্বনিম্নে নেমে যায় জ্বালানি পণ্যটির দাম। এ বিষয়ে আরগাসের হেড অব এলএনজি প্রাইসিং মার্টিন সিনিয়র বলেন, ‘যেসব হেজ ফান্ড (বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান) একসঙ্গে জ্বালানি ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিল তারা বৃহস্পতিবার ঝুঁকি হ্রাসে ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করেছে। ফলে দাম কমেছে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এ দেশগুলো এরই মধ্যে ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের পক্ষে মার্কিন এলএনজি আমদানি বন্ধ করা সম্ভব নয়। ফলে এ পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের আশঙ্কা কম।

তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের একটি পরোক্ষ প্রভাব হচ্ছে ডলারের মান কমে যাওয়া। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে মার্কিন এলএনজি অন্যান্য দেশের জন্য সস্তা হয়ে উঠতে পারে। ফলে মজুদ বাড়াতে ইউরোপে তা কেনার আগ্রহ বাড়বে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস গত বৃহস্পতিবার মে মাসের সরবরাহ চুক্তিতে নর্থওয়েস্ট ইউরোপ এলএনজি মার্কার (এনডব্লিউএম) বাজার আদর্শে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম স্থির করেছে ১২ ডলার ৭ সেন্টে। এছাড়া একই মাসের সরবরাহ চুক্তিতে টিটিএফে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজিতে ৭৫ সেন্ট ছাড় দেয়া হয়েছে।

আরগাস প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২ ডলার ৭ সেন্ট। অন্যদিকে স্পার্ক কমোডিটিজ ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম নির্ধারণ করেছে ১২ ডলার ৪ সেন্ট।

স্পার্ক কমোডিটিজের বিশ্লেষক কাসিম আফগান জানান, শুক্রবার আটলান্টিক মহাসাগরীয় পথে এলএনজির পরিবহন ব্যয় টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো কমে দৈনিক ২৩ হাজার ৫০০ ডলারে নেমে এসেছে। তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথে তা বেড়ে ২৬ হাজার ৭৫০ ডলারে পৌঁছেছে।

– বণিক বার্তা থেকে