ওজোন স্তর ক্ষত কাটাতে করোনার প্রভাব কতটা?
করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের মধ্যেই উত্তর মেরুর আকাশের ওজন স্তরে ১০ লাখ বর্গ কিলোমিটারের একটি বিশাল গর্ত তৈরি হওয়ার খবর দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থ অবজারভেশন প্রোগ্রাম ‘কোপারনিকাস’ । পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর ওজনে এ গর্তের ফলে সরাসরি হুমকির মুখে পড়তো পৃথিবীবাসী। তবে সেই গর্ত নিজে থেকেই আবার সারিয়ে তুলেছে পৃথিবী। গত ২৩ শে এপ্রিল কোপারনিকাস এক টুইট বার্তায় সে খবরই দিয়েছিল।
কোপারনিকাসের এই বার্তার পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য মানুষ ওজোন স্তরের বিশাল এই ক্ষত কাটিয়ে উঠার পেছনে বিশ্বের নানান দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউনের প্রভাব দেখছেন। বেশ কয়েকটি বিদেশী গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ মানুষের এই ভাবনায় হাওয়া দিয়েছে। আসলেই কি তাই? সত্যিকার অর্থেই কি মানুষের ঘরে থাকাটা কোনো প্রভাব ফেলছে ওজোন স্তর ক্ষত কাটিয়ে উঠাতে?
ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় ৭ই এপ্রিল ওজোন স্তরের ক্ষয় নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউনের সাথে ওজোন স্তর ক্ষয়ের কোনো প্রভাব নেই৷ যদিও তখনও ক্ষত কাটিয়ে উঠা সংক্রান্ত কোনো খবর ছিল না।
তবে কোপারনিকাসই ওজোন স্তরের ক্ষত কাটিয়ে উঠার পর ২৬ শে এপ্রিল টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, লকডাউনের সাথে ওজোন স্তর ক্ষয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। অ্যান্টার্কটিক ওজোন স্তরের এই গর্ত মূলত ক্লোরিন এবং ব্রোমিনসহ মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থের দ্বারা ঘটে। এরা পোলার ঘূর্ণির অভ্যন্তরে জমা হয় যা প্রতি শীতে অ্যান্টার্কটিকের উপরে
বিস্তৃতি ঘটে যেখানে তারা অন্ধকারে রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে। ঘূর্ণিতে তাপমাত্রা ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে এবং মেরু স্তরীয় বায়ু (পিএসসি) গঠন করতে পারে যা ওজোন স্তর ক্ষয়কারী পদার্থগুলোর সংস্পর্শে এসে এই অঞ্চলে সূর্যের আলো ফিরে এলে ওজোন স্তরের ক্ষতি করে। প্রায় প্রতিবছরই এমন ঘটে, তবে মন্ট্রিল প্রটোকলের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিগত বছরগুলোয় এই হার সহনীয় পর্যায়ে ছিল। এ বছর এই হার বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কোপারনিকাস জানিয়েছে, দুটি কারণ কাজ করেছে এই ক্ষত সৃষ্টিতে। এ বছর আর্কটিকের মেরু ঘূর্ণি অন্যবারের তুলনায় বেশ শক্তিশালী এবং দীর্ঘকালীন ছিল। ২০২০ সালের শুরুর কয়েক মাস আর্কটিক স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা খুবই কম থাকায় এটি মেরু স্তরীয় বায়ু গঠনের জন্যও সুবিধাজনক ছিল। ফলে এই অবস্হার সৃষ্টি হয়। আশঙ্কা সৃষ্টিকারী এ গর্তটি নিজে থেকেই মিলিয়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সার্বক্ষণিক ওজোন স্তরটি পর্যবেক্ষণ করা সংস্থাটি ।
তবে এই ঘটনার সাথে কোনো ভাবেই করোনা ভাইরাস বা লকডাউনের প্রভাবের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্থাটি।
লেখক: শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূর্যোগ ব্যবস্হাপনা বিভাগ,
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্য সূত্র
১. https://www.theguardian.com/environment/2020/apr/07/record-size-hole-opens-in-ozone-layer-above-the-arctic
২. https://www.indiatoday.in/fact-check/story/ozone-layer-healing-coronavirus-lockdown-1671909-2020-04-28
৩. https://mobile.twitter.com/CopernicusECMWF/status/1254445921905119232