ওডিশায় শুধুই ধ্বংসস্তূপ
ঘূর্ণিঝড় ফণীর ছোবলে ভারতের ওডিশা রাজ্যের সর্বত্র শুধুই ধ্বংসস্তূপ। নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতির ঝড়টি রাজ্যে ব্যাপক তাণ্ডব চালালেও ব্যাপক পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় জানমালের ক্ষতি খুবই কম হয়েছে। ঝড়টি দুর্বল হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পর গতকাল শনিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ঝড়ে পশ্চিমবঙ্গে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফণীর আঘাতে শুক্রবারই ওডিশায় ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। গতকাল শনিবার আরও আটজনের মৃত্যুর খবর আসে। তবে ফণীতে ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট পরিমাণ এখনও জানাতে পারেনি ওডিশা সরকার। তবে রাজ্যের ১০ হাজার গ্রামে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
ঘূর্ণিঝড়ে ওডিশায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে, যাবতীয় কাঠ-বাঁশের কাঠামো ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে, খেলনার মতো উড়ে গেছে ঘরের টেবিল-চেয়ার। ভেঙেছে রাস্তাঘাট। রাজ্যের পুরীতে তীর্থভ্রমণে গিয়ে ফণীর তা ব দেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বাসিন্দা শুভ্রা হাজরা চৌধুরী। তার ভাষায়, ভোর ৫টায় হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দে ঘুম ভেঙেছিল। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, ততই দেখেছি প্রলয়নাচন! কখনও হুড়মুড় করে কাচ ভেঙে পড়ার শব্দ পাচ্ছি, কখনও থরথর করে কেঁপে উঠছে ঘর। খাটে শুয়ে বুঝতে পারছি, সেটা নড়ছে! আমি শুধু এক মনে জগন্নাথদেবকে ডেকে চলেছি। বলছি ‘প্রভু, রক্ষা কর’।
ফণীর কারণে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর থেকেই ওডিশার ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে এর স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে দুর্বল ফণী :ফণীর প্রলয়কাণ্ডের যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেকটাই কম প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটা অংশ ছাড়া খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। রাজ্যে ১২টি কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে এবং ৮২৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১০ বছর আগের আইলার অভিজ্ঞতা থাকায় প্রশাসনিক তৎপরতা ছিল। মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাইক্লোনিক জোনের বাসিন্দারা সাইক্লোন সেন্টারে শুক্রবার সকাল থেকেই আশ্রয় নেন। ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার এটা একটা কারণ। একই সঙ্গে ফণীর শক্তি হারানোও একটা বড় কারণ।
ওডিশা থেকে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুতগতিতে শক্তি খোয়াতে শুরু করে ফণী। এত দ্রুত যে ফণী শক্তি হারাবে সেটা আশা করেননি আবহাওয়াবিদরা। কলকাতার আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দ্রুত শক্তি খোয়ানোর ফলে এ রাজ্যেই ফণী শুধু ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যায়। পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে শনিবার দুপুরের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে এই ঘূর্ণিঝড়। ফলে যে প্রবল আশঙ্কায় প্রহর গুনছিলেন সাধারণ মানুষ, তার অভিঘাত অনেকটাই কম হয়। গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশও রক্ষা পায়। ফণীর কারণে প্রায় ১৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর কলকাতা বিমানবন্দরে আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ভারতের প্রশংসায় জাতিসংঘ :প্রবল শক্তিশালী ফণীর তাণ্ডবে মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের ভূমিকার প্রশংসা করল জাতিসংঘ। সংস্থার ‘অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন’ (ওডিআরআর)-এর মুখপাত্র জেনিস ম্যাকক্লিন বলেন, ‘নির্ভুল সতর্কবার্তায় আগেই ১১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রায় ৯০০টি সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় দেওয়া হয় তাদের। জীবনহানি ও ক্ষয়ক্ষতি রুখতে ভারত খুবই ভালো কাজ করেছে।’