কনডেনসেটের কারণে বিবিয়ানায় গ্যাস উত্তোলন কমলো

কনডেনসেট রাখার জায়গার অভাবে বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বিক্রির জটিলতার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কনডেনসেট থেকে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য তৈরিকারক বেসরকারি ফ্রাকসেশন প্ল্যান্টগুলো নিয়মিত কনডেনসেট নিচ্ছে না। এজন্য কনডেনসেট মজুদ রাখা যাচ্ছে না। তাই গ্যাস উত্তোলন কমানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গ্যাসের সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনডেনসেট উঠে আসে। কনডেনসেট দিয়ে পেট্রোলসহ অন্য জ্বালানি তৈরি করা হয়। যারা এই কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তৈরী করে তারা নিচ্ছে না বলেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। সরকার দাম কমিয়ে দেয়ার কারণে কনডেনসেট নেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
রোববার জ্বালানি বিভাগে এ বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জ্বালানি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশ্লিষ্ঠ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সচিব আবুবকর সিদ্দিক বলেন, সমস্যার সমাধান হয়েছে। খুব শিগগির বেসরকারি কোম্পানিগুলো কনডেনসেট নিতে শুরু করবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য করেই দাম নির্ধারণ করা হয়। ফলে দামের কারণে এই সমস্যা হয়নি। কনডেনসেট থেকে যেসব পণ্য হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় পেট্রোল। কিন্তু বাংলাদেশে পেট্রোলের চাহিদা কম। বর্তমানে এই চাহিদা বছরে এক লাখ ৭০ হাজার টন। ফলে পেট্রোল বিক্রিও কম হয়। এই কারণে কনডেনসেটের চাহিদাও কম।
গতবছরের ২৮ অক্টোবর বিবিয়ানা থেকে বাড়তি গ্যাস তোলা শুরু হয়। প্রথমদিকে এক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার ব্যারেল তরল গ্যাস (কনডেনসেট) উঠতো। গ্যাস যত বেশি উত্তোলন করা হয় কনডেসসেটও ততবেশি উঠে। বর্তমানে ওই ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন গড়ে নয় হাজার ব্যারেল কনডেনসেট উঠছে। বিবিয়ানা গ্যাসের এই কনডেনসেট সিলেট গ্যাসক্ষেত্র, ইস্টার্ন রিফাইনারি, সুপার রিফাইনারি, পেট্রোম্যাক্সসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি কিনে নেয়। কনডেনসেট থেকে পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি করা হয়।
শেভরণের তথ্য কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমান জানান, কনডেনসেট মজুদের ট্যাংকার ভরে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। ট্যাংকারে আর কনডেনসেট রাখা সম্ভব নয়। এজন্য উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কনডেনসেট নেয়া শুরু করলে গ্যাসের উৎপাদনও বাড়ানো হবে।
গত ৮ মার্চ দেশী রিফাইনারিগুলোর কাছ থেকে বিপিসির কেনা বিভিন্ন তেলের দাম ৮ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দেয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়। রিফাইনারিগুলোর কাছ থেকে প্রতি লিটার অকটেন কেনা হতো ৮৮ টাকায়, যা ৫৮ টাকা ২৭ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়। একইভাবে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ৮৫ টাকা থেকে ৫৬ টাকা ২৯ পয়সা, কেরোসিন ৬১ থেকে ৫৭ টাকা ৪৪ পয়সা এবং ডিজেলের দাম ৬০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা ৯৪ পয়সায় নির্ধারণ করা হয়। নতুন এ দাম গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানি ও বিদেশি কোম্পানির দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা কনডেনসেটের দরও কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়। গেজেট প্রকাশের আগে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে প্রতি লিটার ভারী কনডেনসেট ৫৮ টাকায় কিনতো শোধনাগারগুলো, যা ৪২ টাকা ৪৭ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়। এছাড়া হালকা কনডেনসেটের বিক্রয়মূল্য কমিয়ে লিটার প্রতি ৫৩ টাকা ৮ পয়সা করা হয়। পরে এ দাম কার্যকরের সময়টিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যায় পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড। কোম্পানিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে ১২ মার্চ হাইকোর্ট এ দাম কার্যকরের তারিখটি স্থগিত ঘোষণা করে।
এই অবস্থায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিবিয়ানা থেকে কনডেনসেট কেনাও বন্ধ রাখে। এতে বিবিয়ানা গ্যাসেেত্রর মজুদ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায় কনডেনসেট। এ অবস্থায় গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন কমিয়ে কনডেনসেটের উৎপাদনও কমিয়ে দিয়েছে শেভরণ।
বর্তমানে দেশের বেসরকারি খাতে ১০টিরও বেশি ফ্রাকশনেশন কেন্দ্র আছে। যারা কনডেনসেট থেকে পেট্রোালিয়াম জাতীয় পণ্য উৎপাদন করে। পেট্রোম্যাক্স ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলো দেশি উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে।
সিলেটের বিবিয়ানায় অবস্থিত বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গ্যাস তোলা হয়। যা বাংলাদেশের মোট গ্যাস উত্তোলনের প্রায় ৪০ ভাগ।