কপ৩০ থেকে কী আশা করা যায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা (শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর ২০২৫):

ব্রাজিলের শহর বেলেমে আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কপ৩০ আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন।
এটি জাতিসংঘ আয়োজিত একটি সম্মেলন এবং প্রতি বছরই এটি বিশ্বনেতা ও পরিবেশ কর্মীদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হয়ে ওঠে।
তাহলে কপ আসলে কী বোঝায়, এবং এই সম্মেলনে কী হতে পারে?
চলুন জেনে নেওয়া যাক কপ৩০ সম্পর্কে সবকিছু।

কপ (সিওপি) মানে কী?

কপ বা সিওপি এর পূর্ণরূপ হলো করফারেন্স অফ দ্যা পার্টিস — অর্থাৎ “পক্ষভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন”।
এতে অংশ নেয় সেই দেশগুলো, যারা জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো চুক্তি (ইউএনএফসিসিসি)-তে স্বাক্ষর করেছে।
এই চুক্তিটি ১৯৯২ সালে গৃহীত হয়, যখন বিশ্বনেতারা সম্মত হন যে, তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না যা “বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তন” ডেকে আনতে পারে।

তখন থেকে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার একত্রিত হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পরিকল্পনা করছে।
সংখ্যাটি (যেমন কপ৩০) বোঝায় এটি কততম সম্মেলন — প্রথম কপ হয়েছিল ১৯৯৫ সালে, তাই এবারেরটি ৩০তম।

সিওপি বা কপ৩০ কবে এবং কোথায়?

কপ৩০ অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলের বেলেম শহরে, ১০ থেকে ২১শে নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত।
এই অঞ্চলটি হলো আমাজন রেইনফরেস্টের আবাসস্থল — বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র, যেখানে বিলিয়ন টন কার্বন মজুত আছে এবং হাজারো আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও প্রাণী প্রজাতির বসবাস।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট সম্মেলনটি সেখানে হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক কপ, কারণ “এটি আমাজনে অনুষ্ঠিত একটি কপ — আমাজনকে নিয়ে নয়।”

তবে, বন উজাড় এখনো বড় সমস্যা রয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট বন ধ্বংস রোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেকেই সমালোচনা করছেন, কারণ সরকার কপ৩০ আয়োজনে এমন কিছু অবকাঠামো প্রকল্প অনুমোদন করেছে যা বনের ক্ষতি করতে পারে।
এর একটি উদাহরণ হলো নতুন চার লেনের মহাসড়ক, যা শহরে যাতায়াত সহজ করবে কিন্তু এর জন্য হাজার হাজার একর সংরক্ষিত বন কেটে ফেলা হবে।

কারা উপস্থিত থাকবে কপ৩০-এ?

কোন কোন বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার থাকবেন কি না, তাও নিশ্চিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কেউ অংশ নেবেন কি না তা অনিশ্চিত, কারণ প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প দেশটিকে প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন — যদিও তা কার্যকর হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে।

তবে, একজনের উপস্থিতি নিশ্চিত — প্রিন্স উইলিয়াম। তিনি তার বাবা রাজা চার্লসের প্রতিনিধিত্ব করবেন, যিনি অতীতে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
রাজা চার্লস কপ২৮ (দুবাই)-এর উদ্বোধনী ভাষণও দিয়েছিলেন।

কপ৩০ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

প্রতি বছর কপ সম্মেলনে দেশগুলো পরবর্তী বছরের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু এবারের সম্মেলন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ২০৩০ সালের মধ্যবর্তী একটি সঙ্কটপূর্ণ মাইলফলক, যখন দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তির আওতায় নিজেদের জলবায়ু অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে।

২০১৫ সালে প্যারিসে প্রায় ২০০টি দেশ একমত হয় একাধিক পদক্ষেপ নিতে, যাতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ভয়াবহ পরিণতি ঠেকানো যায়।
২০২৫ সাল, অর্থাৎ এই বছরই, দেশগুলোকে তাদের হালনাগাদ জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা জমা দিতে হবে, যা প্যারিস চুক্তির অধীনে বাধ্যতামূলক।

এছাড়া কপ৩০ হবে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত প্রথম জলবায়ু সম্মেলন ১৯৯২ সালের রিও আর্থ সামিট-এর পর, যে সম্মেলন থেকেই ইউএনএফসিসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

কপ৩০-এ কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে?

অনেকেই চাইছেন কপ৩০ যেন উষ্ণমণ্ডলীয় বন রক্ষা-কে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে নেয়।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টও বলেছেন, এই সম্মেলন হবে আমাজনের প্রয়োজনগুলো তুলে ধরার সুযোগ, বিশ্বকে বনাঞ্চল দেখানোর সময়, এবং স্থানীয় সরকার কীভাবে তা রক্ষা করছে তা প্রদর্শনের একটি মঞ্চ।

তবে সামগ্রিকভাবে কপ৩০ মনোযোগ দেবে— বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখা, নতুন এনডিসিস (জাতীয় নির্ধারিত অবদান) উপস্থাপন এবং গত বছরের কপ২৯-এর প্রতিশ্রুতিগুলোর অগ্রগতি মূল্যায়নের ওপর।

সংক্ষেপে:
কপ৩০ হতে যাচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন, যা শুধু ব্রাজিল নয়, পুরো বিশ্বের ভবিষ্যৎ জলবায়ু নীতিকে প্রভাবিত করবে।
বিশেষ করে এটি এমন এক মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের সময়সীমা ঘনিয়ে এসেছে — তাই বেলেমে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি