করোনার মধ্যেও বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে

অরুণ কর্মকার:

প্রায় এক মাস হতে চলল করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের অভিঘাত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য চলেছে লকডাউন। দেশের উদ্যোক্তা মহল থেকে কর্মজীবী মানুষ সকলকেই এই পরিস্থিতির মধ্যেও অনেকটাই সচল রেখেছেন অর্থনৈতিক কর্মকাÐ। বিদ্যুৎ ব্যবহারের চিত্র এ কথাই প্রমাণ করে।
যদিও লকডাউনে অফিস-আদালত, দোকানপাট, বড় বড় বিপণীবিতান সবই বন্ধ। শিল্প-কারখানাও শতভাগ সক্ষমতায় চলছে না। চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নিয়ন্ত্রিত পন্থায়। তারপরও বিদ্যুৎ ব্যবহার গত বছরের এই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেশি। অর্থাৎ গত বছর মার্চের শেষ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে অর্থনৈতিক কর্মকাÐে যে ধরণের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিল এবছর তেমনটা হয়নি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মার্চ মাসে দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা মিলে মোট বিদ্যুৎশক্তি (এনার্জি) ব্যবহারের পরিমান ছিল ৫ হাজার ৫৯৪ দশমিক ১৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ বছর মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২১৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। গত বছরের তুলনায় এ বছরের ব্যবহার বাড়ার হার ২৯শতাংশ।
একইভাবে গত বছর এপ্রিলে দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা মিলে মোট বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহারের পরিমান ছিল ৩ হাজার ৪৫৪ দশমিক ০৬ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। কিন্তু এ বছর এপ্রিলের ১৯ তারিখ পর্যন্তই ব্যবহার হয়েছে ৪ হাজার ৮২৭ দশমিক ৩২ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। গত বছরের তুলনায় এ বছরের এই সময়ে ব্যবহার বাড়ার হার ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এপ্রিল মাসের ১৪ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছর এপ্রিলের এই সময়ে মাত্র একদিন (১৪ই এপ্রিল) সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হয়েছিল (১০,৩৪৪ মেগাওয়াট)।
অন্যদিকে এ বছর একই সময়ে সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৩৮০ মেগাওয়াটে। এপ্রিলের ১৯ তারিখের মধ্যে অন্ততঃ তিন দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি ছিল। অন্যান্য দিনগুলোতেও তা ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বা তার কাছাকাছি ছিল। লকডাউন উঠে গেলে, ঈদের আগে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নীতিসহায়তা ও গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা হওয়ার কথা ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। সেখানে প্রায় ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট চাহিদা উঠেছে। আর যে ব্যবধানটুকু আছে তা করোনা পরিস্থিতির কারণে দোকানপাট, শপিং মল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। তিনি বলেন, অর্থাৎ দোকানপাট, শপিং মল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অর্থনৈতিক কর্মকাÐই চলছে, যা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সহায়ক। দ্বিতীয়ত, ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট সর্বোচ্চ চাহিদার যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল তারও যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে।