কাজ শুরু হলো পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের
অবশেষে কাজ শুরু হলো পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের। বাংলাদেশে এটাই প্রথম আমদানি করা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে।
এ কেন্দ্র স্থাপনে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এখান থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে তার দাম ধরা হয়েছে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৬৫ পয়সা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোটেল রেডিসনে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) এবং চীনের নর্থ-ইস্ট ইলেকট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এনইপিসি) ও চায়না ন্যাশনাল এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিইসিসি) মধ্যে প্রকৌশল, ক্রয় ও নির্মান (ইপিসি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সুইচ চেপে একেন্দ্রের কাজের সুচনা করেন।
এর আগে এ কেন্দ্র স্থাপনে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সাক্ষর করে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ওই এমওইউর আলোকে একটি যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়। এর মালিকানা সমান সমান থাকবে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন ও সিএমসির। এ কেন্দ্র স্থাপনে চীনের একটি কোম্পানি অর্থায়নের কথা রয়েছে। তবে অর্থ ঋণ চুক্তির আগেই এ কেন্দ্রের কাজ শুরু হবে। কারণ দরপত্রের শর্ত অনুযায়ি ঠিকাদার কোম্পানি নিজেদের অর্থায়নে কাজ শূরু করবে। পরে অর্থচুক্তির পর সে টাকা সমন্বয় করা হবে। চুক্তির আগে অন্ত ২৫ ভাগ কাজ করতে পারবে।
চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম ভাল স্থান। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলেছে। কর্মশক্তির বিকাশে বিদ্যুৎ বড় ভ’মিকা রেখে চলেছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি আমাদের অর্থনীতির জীবনীশক্তি ও কর্মশক্তি। বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আরো উন্নয়নের জন্য আমাদের ক্ষমতা ও সামর্থ্যকে বাড়াতে হবে। এ জন্য দেশের বাইরে থেকে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। আমরা বিনিয়োগ চাই।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধরী বলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই কেন্দ্র হবে পরিবেশ বান্ধব। এখান থেকে পরিবেশ দূষন হবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে দেশি-বিদেশি কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগ খুবই ভালো উপায়। উদ্যোগ গ্রহণের পর অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। আলোকিত বাংলাদেশের পথে এটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎখাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। ভবিষ্যতে আমাদের ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা শুধু ঠিকাদার হিসেবেই নয় আরো বেশী বিনিয়োগকারী হিসেবেও পেতে চাই। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন উন্মুক্ত ও ভালো জায়গা।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদুত মা মিংকিয়াং, নর্থ ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশীদুল আলম।
বিসিপিসিএল’র সচিব দীপক কুমার ঢালী, এনইপিসি’র সভাপতি চাই্য মিং ও সিইসিসি’র সভাপতি চ্যান ইয়ুইয়ু নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।