ক্যাপটিভ বিদ্যুতে জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম ক্যাপটিভ বিদ্যুতে জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি এই দক্ষতা ৬০ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। শিল্প উদ্যোক্তরাও তাদের নিজস্ব ছোট ছোট এই বিদ্যুৎ জেনারেটর ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিবেন বলে জানিয়েছেন। যাতে কম গ্যাস ব্যবহার করে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের একটি প্রতিনিধিদল উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেন। এসময় তারা গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের দাবি জানান। শিল্প এবং শিল্পের ব্যবহার করা ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবি জানান উদ্যোক্তারা। বৈঠক সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
এদিকে উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে বুধবার বিকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে শিল্প উদ্যোক্তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়। উদ্যোক্তারা আগামী একমাসের মধ্যে চাহিদাপত্র পাওয়া শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবি জানান। শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া সংক্রান্ত কমিটির মাধ্যমে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, শিল্পকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। তবে নতুন করে গ্যাস না পাওয়া গেলে ২০১৮ সালের পরে আর নতুন কারখানায় গ্যাস দেয়া যাবে না। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে এই চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য গভীর সমুদ্রে ভ্রাম্যমান টার্মিনাল স্থাপন করা হচ্ছে।
উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উদ্যোক্তাদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ, সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, বর্তমান সহ-সভপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, ইএবির সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিটিএমএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, এমসিসিআইর পরিচালক কামরান টি রহমান, কোহিনুর ক্যামিকেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিমসহ অন্যরা।
এফবিসিসিআই-এ অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে চাহিদাপত্র পাওয়া শিল্প কারখানায় আগামী মাসের মধ্যে গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে স্থানান্তরিত পোশাক কারখানার পুরনো গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ সরাসরি পাওয়ার নিশ্চয়তা চান উদ্যোক্তারা। একই সাথে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বন্ধ থাকা সরকারি ও ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আবার চালু করতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।
শিল্পায়ন পরিস্থিতি, সম্ভাবনা, সমস্যা ও ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে বেসরকারি খাতের মতামত তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি মাতলুব আহমাদ, সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, এ কে আজাদ প্রমূখ। ইন্টারন্যাশনার চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ এর (আইসিসি’বি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ, দেওয়ান সুলতান আহমেদসহ এফবিসিসিআই’র পরিচালকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মাতলুব আহমাদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা ৮০০ বিলিয়ন ঘটফুট। কিন্তু মজুদ আছে সাড়ে ১৪ ট্রিলিয়ন ঘটফুট (টিসিএফ)। এ পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে গ্যাসের সংযোগ দিতে চাইছে না। তবে ইতিমধ্যে যে সব গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে সেখানে গ্যাসের সংযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত (বিটিএমএ) কারখানায় প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। মজুদ যতই কম হোক এসব কাখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এফবিসিসিইাই সভাপতি বলেন, ১৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে সাত থেকে আট হাজার মেগাওয়াট। এরমধ্যে কিছু কেন্দ্র আর্থিকভাবে সক্ষমতার অভাবে বন্ধ হয়ে আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। দর সমন্বয় করা হলে বন্ধ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করতে সম্মত আছেন উদ্যোক্তারা।
কাজী আকরাম বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। এ অবস্থা বজায় থাকলে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবেন ব্যবসায়ীরা। এ কে আজাদ বলেন, শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। চাহিদাপত্র পেয়ে উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন । কিন্তু সংযোগ দেওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরী হওয়ায় এখন উৎপাদনে যাওয়ার সময় গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। অল্পকয়েকটি কারখানায় সংযোগ দেয়া হয়েছে। চাহিদাপত্র পাওয়া সব কারখানায় দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক বিষয়ে উদ্যোক্তারা জানান, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে (শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন জেনারেটর) জ্বালানি দক্ষতা ৬০ শতাংশ করার তাগিদ দিয়েছেন উপদেষ্টা। ক্যাপটিভ বিদ্যুতে জ্বালানি দক্ষতা ৬০ শতাংশ হলেই নতুন করে সংযোগ দেয়া হবে বলে তিনি জানান। গ্যাস, ডিজেল কিংবা ফার্নেস ওয়েল দিয়ে সাধারণত ক্যাপটিভ চালানো হয়।
বর্তমানে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব এই বিদ্যুৎ জেনারেটরের জ্বালানি দক্ষতা আছে গড়ে ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ। যা পিডিবি ও ভাড়ায় আনায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চেয়ে বেশি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ জ্বালানি দক্ষতার কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি দক্ষতা বেশি। হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি দক্ষতা ৪৮ শতাংশ, যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আর পুরানো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এই দক্ষতা আরও কম।