কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমাচ্ছে সরকার

সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনছে। তবে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) পর্যালোচনা করে পরিকল্পনায় এসব পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
২০১০ সালে ২০ বছর মেয়াদি (২০৩০ সাল পর্যন্ত) বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। পাঁচ বছর পর পর মহাপরিকল্পনাটি পর্যালোচনা করার কথা। সে অনুযায়ী এ বছর তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এই পর্যালোচনায় এমন পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার কারণ কয়লা আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় আবকাঠামো নির্মাণ বিলম্বিত হওয়া এবং দেশের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা বা দোদুল্যমানতা।
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করে কাজ করছে। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার মেগাওয়াট। এই ২০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে আবার ১১ হাজার মেগাওয়াট দেশের কয়লা দিয়ে এবং নয় হাজার মেগাওয়াট আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করে উৎপাদন করার কথা।
কিন্তু ২০১০ সালে এই পরিকল্পনা করা হলেও এখন পর্যন্ত কয়লা আমদানির বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লা পাওয়া গেলেও তা আনার জন্য বন্দরসহ যে অবকাঠামো দরকার, তা এখনো নেই। এ অবকাঠামো দু-চার বছরে গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ দেশীয় কয়লা তোলার ব্যাপারেও সরকার এখন পর্যন্ত দৃশ্যত সিদ্ধান্তহীন।
এ অবস্থায় পিএসএমপি পর্যালোচনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার মেগাওয়াট থেকে কমিয়ে নয় হাজার মেগাওয়াট করা হবে। এর সবই উৎপাদিত হবে আমদানি করা কয়লায়। অপর দিকে, বর্তমানে পিএসএমপিতে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। পর্যালোচনায় এটা বাড়িয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত করা হতে পারে।
এত বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি বাস্তবে সম্ভব হবে কি না, জানতে চাইলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এটা অসম্ভব হবে না। কারণ, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে বর্তমানে যে লাইনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে, সেখান থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াট আসবে। ভারতের ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী বছরই ১০০ মেগাওয়াট আসবে। এরপর তা আরও কিছু বাড়তে পারে।
সূত্র আরও জানায়, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া হয়ে বিহারের সঙ্গে যে গ্রিডলাইন সংযোগের বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে, সেখান থেকে বাংলাদেশ পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকে পানিবিদ্যুৎ আনার বিষয়েও বাস্তব অগ্রগতি আছে। বাংলাদেশ তার পূর্বাঞ্চলের প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে। সে দেশে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকে বিদ্যুৎ আনা সম্ভব হবে বলেও সরকার আশাবাদী।
পর্যালোচনা করে সংশোধন করা পিএসএমপিতে ২০৩০ সালের লক্ষ্য পূরণের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করা হবে। সে অনুযায়ী গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার মেগাওয়াট। আমদানি করা হবে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে হবে চার হাজার মেগাওয়াট। তরল জ্বালানি থেকে করা হবে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট। কয়লাভিত্তিক হবে নয় হাজার মেগাওয়াট। এ ছাড়া তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘দেশের কয়লা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য এটা করা হচ্ছে।’

– দৈনিক প্রথম আলো থেকে