কয়লার অভাব: বন্ধ হয়ে গেল বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র
কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেল বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। যে কয়লা মজুদ ছিল তা শেষ। রোববার রাত ১০টা ১০ মিনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরফলে সোমবার প্রথম প্রহর থেকে সাময়িকভাবে এই কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, কয়লার সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন করে কয়লা তুলে তা সরবরাহ করতে কমপক্ষে একমাস লাগবে। অর্থাৎ আমাগী প্রায় একমাস এই কেন্দ্রর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে। এতে উত্তরাঞ্চলে কম ভোল্টেজ ও লোডশেডিং বাড়বে। সারা দেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ঠরা।
এদিকে পিডিবি জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গ্যাস ও তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। পেট্রোবাংলা উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে। সেই গ্যাস উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেয়া হবে। একই সাথে কিছু সরবরাহও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রয়োজনীয় কয়লা মজুদ না রেখেই খনির কূপ পরিবর্তনের কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে কয়লা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর এভাবে কূপ পরিবর্তন করা হয়। তখন আগে থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা মজুদ রাখা হয়। এবার তা করা হয়নি।
বড়পুকুরিয়ায় তিনটে ইউনিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এরমধ্যে দুটোতে ১২৫ মেগাওয়াট করে ২৫০ মেগাওয়াট। আর একটাতে ২৭৪ মেগাওয়াট। প্রথম দুটোতেই শনিবার ও রোববার সন্ধ্যায় ৮৫ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। আর তিন নম্বর ইউনিট থেকে পুরোপুরি। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ৪৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন। সাধারণত খনির মজুদাগারেই বেশির অংশ কয়লা মজুদ থাকে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মজুদাগারে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা থাকার কথা।কিন্তু গত শুক্রবার পর্যন্ত ছিল মাত্র ৫/৭ হাজার টন। বাকি এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা কোথায় গেল তা এখনও জানা যায়নি।
গত ২৯শে জুন থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কূপ পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। আগষ্টের শেষ নাগাত এটা শেষ হবে।
রংপুর বিভাগের ৮ জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় পুরোটাই এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল।
কয়লা সংকটে এ কেন্দ্রের উৎপাদন কমলে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। এখন উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাট বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘এ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংকটে পড়বেন দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলের গ্রাহকরা।
উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রতিদিন ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এর মধ্যে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
কয়লা সংকটের কারণে গত এক মাস এ কেন্দ্রের দুই ইউনিট বন্ধ থাকায় সেখান থেকে মাত্র ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এ কারণে এক মাস নেসকো এলাকায় বিদ্যুৎ ঘাটতি অনেক বেশি।