কয়লার লাইসেন্স বাতিলে ভারতের শিল্প হুমকিতে
ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বিগত ১৭ বছরে (১৯৯৩-২০১০) কয়লা উত্তোলনে দেয়া সব লাইসেন্স অবৈধ ঘোষণা করেছে। আদালতের এ রায়ে শুধু যে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের শিল্প প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ল তাই নয়, প্রবৃদ্ধি উত্তরণে দেয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। খবর ব্লুমবার্গ।
গত সোমবার ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, অস্বাভাবিক কম দামে লাইসেন্স দেয়ায় ভারত প্রায় ২১০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
২০১০ সালের পর কয়লা উত্তোলনের লাইসেন্স প্রদানে নিলাম চালু করে ভারত। ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত ২১৮টি লাইসেন্স দেয় সরকার। লাইসেন্সগুলো বাতিল করা হবে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন আদালত।
২০১২ সালের এক প্রতিবেদনে নিরীক্ষা বিভাগ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) অফিস জানায়, কয়লা খনিগুলোর লাইসেন্স প্রদানে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হয়েছে সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো।
সেই সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও অভিযোগ করেছিল, প্রতিযোগিতামূলক দরপ্রস্তাব ছাড়াই কয়লা খনির লাইসেন্স দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে কংগ্রেস সরকার।
তবে সর্বোচ্চ আদালতের সোমবারের রায় অনুসারে তারাও দায় এড়াতে পারে না। কারণ কংগ্রেসের ঠিক আগেই তারা ক্ষমতায় ছিল। রায়ের পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর।
ম্যাককয়ার ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের বিশ্লেষক রাকেশ অরোরা বলেন, ‘লাইসেন্সগুলো বাতিল করার অর্থ দেশের বিদ্যুৎ খাতকে বিধ্বস্ত করে দেয়া। এতে জ্বালানি ঘাটতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেবে, যা শিল্প উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাবে। এ অবস্থায় বিদ্যুেকন্দ্র, সিমেন্ট এবং অ্যালুমিনিয়াম কারখানাগুলোকে দেশের বাইরে থেকে কয়লা কিনতে হবে, যা দেশের আমদানি বিল ৩০০ কোটি ডলার বাড়িয়ে দেবে।’ এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে মোদির পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের জ্যেষ্ঠ গবেষক রাজিব কুমার এ প্রসঙ্গে বলেন, লাইসেন্স বাতিলের মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং শিল্প-কারখানাগুলো এখান থেকে আর কয়লা নিতে পারবে না। প্রকল্পগুলোয় দেয়া ব্যাংকঋণও আটকে যাবে।
ভারতের অর্থনীতির জন্য কয়লা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মোট বিদ্যুতের ৬০ শতাংশ কয়লার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। এতে ধারণা করা হচ্ছে আদালতকে অবৈধ কয়লা খনি প্রতিহত করতে নতুন পথ দেখতে হবে।
কয়লা খনিতে এরই মধ্যে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব পাওয়ার প্রডিউসারের মহাপরিচালক অশোক খোরানা। আদালতের রায় বাস্তবায়িত হলে পুরো অর্থই অনিশ্চয়তায় পড়বে।