কয়লা উধাও: পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে দুদকের জিজ্ঞাসা, ফৌজদারী মামলা হচ্ছে

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি

বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত দল। এদিকে সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ এনে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা বলে এনার্জি বাংলাকে  জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়্যারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ।
চেয়ারম্যান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা চুরি হয়েছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে এবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। পেট্রোবাংলার তদন্ত দল বড়পুকুরিয়াতে সরোজমিনে আজ তদন্ত করছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে দুদকের তদন্ত দল মঙ্গলবার দুপুরে পেট্রোবাংলায় এসে কয়লা উত্তোলন, ব্যবহার, বিক্রি, বার্ষিক হিসাবসহ বিভিন্ন নথি নিয়ে গিয়েছে। একই সাথে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছে। অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া খনির সংশ্লিষ্ঠ চার কর্মকর্তা যেন বিদেশ যেতে না পারে তা আটকাতে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শামসুল আলম বলেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি। সকল বিষয় পর্যালোচনা শেষে ১৫ দিনের মধ্যে এবিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেব।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পরিচালক (অপারেশন) এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। এছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, জুন মাসের হিসাব অনুযায়ি বড়পুকুরিয়া খনির মজুদাগারে তিন লাখ আট হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ ছিল। আর জুলাই মাসে ছিল এক লাখ ৪৭ হাজার টন। কিন্তু বাস্তবে মাত্র তিন হাজার টন কয়লা দেখা গেছে।
পেট্রোবাংলার চেয়্যারম্যান বলেন, কয়লা উত্তোলন ও বিক্রির হিসাব অনুযায়ি কয়লা মজুদ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছিলেন, যে কয়লা মজুদ আছে তা দিয়ে ৫০ দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে। কিন্তু পরে দেখা গেল সে পরিমান কয়লা উত্তোলন করা নেই।
কয়লা খনি চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিক্রির পর কী পরিমান কয়লা জমা আছে তার হিসাব রাখা হয়নি। বার্ষিক আয়-ব্যয় এবং কয়লা উত্তোলন ও বিক্রির হিসাব করা হয়েছে। নিরীক্ষা বিভাগ উদ্বৃত্তপত্রও অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু উত্তোলন করা কয়লার মজুদ আছে কী নেই তার হিসাব রাখা হয়নি। দিনের পর দিন হিসাব ছাড়া এভাবে কেমন করে চলল তারও তদন্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করতে অতিরিক্ত আট কোটি ঘনফুট গ্যাস বেশি বিদ্যুতে দেয়া হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে। বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে জরুরীভাবে চার কোটি গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো হয়েছে। কাফকো সারকারখানা বন্ধ করে তিন কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ এলাকায় অর্থাৎ তিতাস গ্যাস এর সরবরাহ সামান্য কমিয়ে আরও এক কোটি ঘনফুট গ্যাস বাড়তি দেয়া হয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রর সকল ইউনিট ও ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে। বেশিরভাগ কয়লা খনি এলাকাতেই মজুদ থাকে। প্রায়ই বছর খনির গুহা পরির্বতনের জন্য প্রায় এক মাস কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকে। খনি থেকে এমন কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকলে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কয়লা মজুদ করে রাখা হয়। কিন্তু এবার ব্যবস্থাপনার গাফিলতির কারণে সে কয়লা মজুদ করে রাখা হয়নি। আর সেই মজুদ করে না রাখার কারণে কয়লার সরবরাহ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পরই কয়লা চুরি যাওয়ার বিষয় উদঘাটন হয়েছে। সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ না হলে এখানে যে দিনের পর দিন দুর্নীতি হচ্ছে তা জানা যেত না।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম জানিয়েছেন, জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সমস্যার সমাধান হতে এক মাস সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেয়া ছাড়াও স্থানীয়ভাবে কয়লা বিক্রি করা হয়। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্ধারিত ডিলারদেরকে এই কয়লা দেয়া হয়।