কয়লা থেকে মুক্তির লক্ষ্য , কিন্তু এশিয়ায় বাড়ছে ব্যবহার

ইবি ডেস্ক/ বিডিনিউজ:

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে শুরু হতে যাওয়া কপ২৬ এ শক্তির উৎস হিসেবে কয়লা নির্মূল অন্যতম লক্ষ্য হলেও এশিয়ায় এর ব্যবহার বাড়ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০০ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে, যার মধ্যে ৯৫টি চীনে, ২৮টি ভারতে, ২৩টি ইন্দোনেশিয়ায় বলে তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল এনার্জি মনিটর (জিইএম)।
এরমধ্যে ভারতের তামিলনাডু রাজ্যে সাত কোটিরও বেশি মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তৈরি হচ্ছে উডানগুডি প্লান্ট। বিশাল এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি প্রতি বছর লাখ লাখ টন কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। অন্তত ৩০ বছর ধরে কার্বন নিঃসরণ করবে এ প্রকল্পটি।
এভাবে এশিয়ার এই নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো দশকের পর দশক ধরে পৃথিবীর তামপাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্যাসগুলো নির্গমণ করে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়া শিল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিভক্তির অন্যতম বিষয় কয়লার ব্যবহার।
কার্বন নিঃসরণ কমাতে অনেক শিল্পোন্নত দেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই ২০০০ সাল থেকে ৩০১টি এ ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ যেখানে বাস করে সেই বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়ায় কয়লার ব্যবহার দ্রুত সঙ্কুচিত হওয়ার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতেই মহাদেশটির উন্নয়নশীল দেশগুলো এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
জিইএমের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী নির্মাণাধীন ১৯৫টি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৯০ শতাংশেরও বেশি এশিয়ায়।
তামিলনাডু ভারতের দ্বিতীয় শিল্পোন্নত রাজ্য। রাজ্যটি ভারতের অন্যতম শীর্ষ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদক। তারপরও তারাই দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প তৈরি করছে।
‘আমরা শুধু সৌর ও বায়ুর ওপর নির্ভর করতে পারবো না’ রয়টার্সকে বলেছেন তামিলনাডু জেনারেশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্পোরেশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ‘কয়লাই বিদ্যুতের প্রধান উৎস, সৌর শুধু কেকের উপরের প্রলেপ মাত্র’ বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের নাটকীয় বৃদ্ধি ঘটলেও বিশ্ব অর্থনীতি এখনও বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপরই নির্ভরশীল।
বিপি স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৩৫ শতাংশের বেশি এসেছে কয়লা থেকে, প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে, ১৬ শতাংশ নদীর বাঁধগুলো থেকে, ১০ শতাংশ পারমাণবিক ও ১২ শতাংশ সৌর ও বায়ুর মতো নবায়ণযোগ্য উৎসগুলো থেকে।
চলতি বছর বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদা আরও বেড়ে যাওয়ায় কয়লার চাহিদার নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। রেকর্ড চাহিদা চলতি বছর কার্বন নিঃসরণের ব্যাপক বৃদ্ধিরও কারণ হচ্ছে। গত বছর মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করাতে জ্বালানির ব্যবহার কম হওয়ায় কার্বন নিঃসরণও কমেছিল।