খাদ্য ও পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে নবায়নযোগ্য: কিছু প্রস্তাব
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিহীন দারিদ্য দূরীকরণ ও প্রান্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সৌর অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ৬০ লাখ সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে, যা বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় তিন কোটি সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ সম্প্রদায়কে উপকৃত করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় একাজ হয়েছে।
দেশে করোনার মহামারী দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পুনর্বাসন ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পরিবেশ বান্ধব জালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য শক্তি বাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
সৌর সেচ পাম্পের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন
চলমান মহামারীতে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদনকে অগ্রধিকার দিয়ে কৃষিতে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রণোদনা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য কৃষকদেরকে ভর্তুকি মূল্যে ছোট আকারের সৌর সেচ পা¤প দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ লাখ ডিজেল চালিত সেচ পা¤প আছে। এরমধ্যে দুই লাখ সৌর সেচ পাম্পে রূপান্তর করা যেতে পারে। এরফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেমন অগ্রগতি হবে, তেমনি কার্বণ নিঃসরণ-ও কমবে। সৌর সেচ পা¤প বসানোর ফলে অতি দ্রুত সময়ে কৃষক উপকৃত হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দুই হাজার ৫শ’ কোটি টাকার তহবিল প্রয়োজন হবে।
নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়ন
ভ্রাম্যমান সৌর বিদ্যুৎ
সৌর পিভি-ডিজেল হাইব্রিড মিনি কোল্ড স্টোরেজ
নবায়নযোগ্য শক্তির দ্বারা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বৈদ্যুতিকরণ
কমিউনিটি ক্লিনিক নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন
নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে বিদ্যুতায়ন
রাস্তার আলোয় সৌর
নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়ন
করনা মহামারী কাটিয়ে উঠতে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এতে শহরের নাগরিক পরিসেবা খুব সহজেই গ্রামে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। সৌর প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সৌর পা¤েপর মাধ্যমে সুপেয় পানি, কমিউনিটি বায়োগ্যাসে ঘরে ঘরে গ্যাস দেয়া যায়। এতে প্রতিটি গ্রামের জন্য আনুমানিক ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।
ভ্রাম্যমান সৌর বিদ্যুৎ
চাষযোগ্য জমির উপর অতিরিক্ত বোঝা না ফেলে ভ্রাম্যমান সৌর নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের এক অভিনব ধারণা। সমুদ্র, হ্রদ, পুকুর, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জলাধার, ওয়াইনারি, মাছের খামার, বাঁধ এবং খালের মতো জলাশয়গুলোতে ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ করা যেতে পারে।
সৌর পিভি-ডিজেল হাইব্রিড মিনি কোল্ড স্টোরেজ
সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনার সহায়তায় নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে ৫০০টি প্রত্যন্ত অঞ্চলে “সোলার পিভি-ডিজেল হাইব্রিড মিনি কোল্ড স্টোরেজ” প্রকল্প গ্রহণ করা খুব সময়োচিত সিদ্ধান্ত হবে। এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ হবে ৩৫ লাখ টাকা। এর জন্য ৩/৫ বছরে প্রায় একশত পঁচাত্তর কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
নবায়নযোগ্য শক্তির দ্বারা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বৈদ্যুতিকরণ
আর্থিক প্রণোদনার সহায়তায় নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে খরচ হবে প্রায় ১২ বারো লাখ টাকা।
কমিউনিটি ক্লিনিক নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা গেলে অতিজরুরি পরিস্থিতিতেও সেবা অব্যহত রাখা যাবে। একশ’টি দুর্গম এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিককে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করতে আনুমানিক খরচ হবে ১৫ লাখ টাকা।
নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে বিদ্যুতায়ন
প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকার প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা যায়। এতে আনুমানিক ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। ৩ বছরে মোট লাগবে ২০ কোটি টাকা।
রাস্তার আলোয় সৌর
সৌর স্ট্রিট লাইট বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে রাস্তায় এক লাখ সৌর বাতি লাগানো যেতে পারে। এরজন্য ৩ থেকে ৫ বছরে আট হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।
লেখক
প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশ সোলার ও রিনিউবল এনার্জি এসোসিয়েশন (বিএসআরইএ)