গণশুনানি: ভর্তুকি চূড়ান্ত না করে সার উৎপাদনে গ্যাসের বাড়তি দাম নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা (রোববার, ৬ই অক্টোবর ২০২৫):

ভর্তুকি চূড়ান্ত না করে সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ালে সার সংকট হতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরশেন (বিসিআইসি)।

সার উৎপাদনে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার যে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোারেশন (পেট্রোবাংলা)।

সোমবার এই প্রস্তাবের উপর গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গণশুনানিতে দাম বাড়ানোর বিপক্ষে মত দেন  উপস্থিত ভোক্তারা। তারা বলেন, সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে কৃষি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)

ভোক্তাবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ তুলে গণশুনানি বর্জন করে।

বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বেড়ে গেলে কৃষি কাজে খরচ বাড়বে। খাদ্যের নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের বিষয়টি অবশ্যই ভাবনায় রাখতে হবে। আবার এলএনজি আমদানির খরচের বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনতে হবে। কমিশন সব যুক্তির যথার্থতা যাচাই করে আদেশ চূড়ান্ত করবে।

প্রস্তাব, কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, গণশুনানিতে উপস্থাপিত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষের মতামতসহ সার্বিক বিষয়ে বিচেনা করে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিইআরসি।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দাম বাড়ানো হলে বাড়তি ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সার উৎপাদনে সরবরাহ করা হবে। ৬ মাস (অক্টোবর-মার্চ) পুরোমাত্রায় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট ৬ মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে ১৬৫ মিলিয়ন হারে, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩০ মিলিয়ন হারে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হবে।

৩রা অক্টোবর সার উৎপাদনে ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়েছে।

বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুরোমাত্রায় গ্যাস সরবরাহ হলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন সম্ভব।  গ্যাসের দাম যদি ৩০ টাকা হয়, আর যদি ২০ লাখ টন উৎপাদন করা যায় তবে কেজি প্রতি সারের উৎপাদন খরচ পড়বে প্রায় ৪৬ টাকা। এখন সার আমদানিতে প্রায় ৬১ টাকা খরচ হচ্ছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্যাসের অভাবে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি ৩৬১ দিন, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি ২৭৩দিন এবং ঘোড়াশাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি ১৯৮ দিন বন্ধ ছিল। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি মাত্র ৩.৭৫ শতাংশ সময় উৎপাদনে ছিল।

বিসিআইসি বলছে, বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার যোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬ থেকে ২১ লাখ টন যোগান দিতে হয়। গ্যাস অভাবে বন্ধ থাকায় কারখানাগুলো কুলিং টাওয়ার, ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে অপরেশনাল খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এবিষয়ে  অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া দরকার বলে জানানো হয়।

বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ  গড়ে ৩৮ টাকা। বিসিআইসি ডিলারের কাছে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করে, আর ডিলার বিক্রি করেন ২৭ টাকা। দরে। কেজি ১৩ টাকা ভর্তুকি। গ্যাসের দাম বাড়লে ভর্তুকি কমবে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর কারও কোনো মতামত থাকলে তা ১৩ই অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে কমিশনকে জানানো যাবে।