গভীর সমুদ্রে খনিজ অনুসন্ধান শুরু: আরও ৩টি ব্লক ইজারার প্রস্তুতি
রফিকুল বাসার:
বাংলাদেশে অগভীর সমুদ্রে খনিজ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। যৌথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ভারতের দুই কোম্পানির সাথে আছে বাপেক্স। সমুদ্র বিজয়ের ১২ বছর পর এই কার্যক্রম শুরু হলো।
কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর উপকূলে ৪ নম্বর গ্যাস ব্লকে অনুসন্ধান কূপ খনন চলছে। মাটির নিচে ৪ হাজার ২০০ মিটার বা ১৩ হাজার ৭৮০ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করা হবে। আগামী তিন মাস ধরে এই কূপ খনন করা হবে। তারপর একমাস তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর জানা যাবে গ্যাস আছে না নেই।
পেট্রোবাংলার সাথে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির ভিত্তিতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড এবং অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কনসোর্টিয়াম এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) যৌথভাবে বঙ্গোপসাগরের এসএস-৪ ব্লকে খনন কাজ শুরু করেছে।
ওএনজিসি বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার রাজেন্দ্র প্রসাদ বাদেনি এনার্জি বাংলাকে বলেন, আমরা সফলভাবে খনন শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে আশা করি। বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা সেখানে সবসময় তদারকি করছেন। সর্বোচ্চ সর্তকতার সাথে কূপ খনন চলছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি-পিএসসি) প্রকৌশলী মো. শাহীনুর ইসলাম এনার্জি বাংলাকে বলেন, সম্ভাবনাময় স্থান নির্ধারণ করেই খনন করা হচ্ছে। তিন মাসের মধ্যে এর ফল জানা যাবে।
- যৌথভাবে অনুসন্ধান করছে ভারত
- সমুদ্রে প্রথম অংশীদার বাপেক্স
- গ্যাস পেলে প্রতিবছর ৫৫ শতাংশ খরচ নেবে ভারতীয় কোম্পানি
সংশ্লিষ্ঠরা জানান, এসএস-৪ সমুদ্রের ব্লক হলেও যেখানে কূপ খনন করা হচ্ছে সেটা সমুদ্রের উপকূল। অর্থাৎ স্থলভাগ। এরপরে আরও দুটি কূপ খনন করবে ওএনজিসি। দুটোই অগভীর সমুদ্রে। একটা ৪ নম্বর ব্লকে আর অন্যটা ৯ নম্বরে। আগামী বছরের মাঝামাঝি একটা এবং শেষের দিকে আর একটা কূপ খনন করা হবে।
ওএনজিসির মাধ্যমে ভারতীয় কোন কোম্পানি এই প্রথম বাংলাদেশের গ্যাস অনুসন্ধানে অংশ নিল। আবার ওএনজিসির সাথে অংশীদার হয়ে বাপেক্স এই প্রথম সমুদ্রের গ্যাস ব্লকের অংশীদার হলো।
গ্যাস ব্লকের ৯০ ভাগের অংশীদার ভারতীয় ঐ দুই কোম্পানি। আর বাকী ১০ ভাগের অংশীদার বাপেক্স।
চুক্তি অনুযায়ী, অংশীদার হলেও বাপেক্সের এখানে প্রাথমিকভাবে কোন খরচ হবে না। যদি গ্যাস পাওয়া যায় তখন বাপেক্স তার অংশের খরচের অর্থ দেবে। আর যদি গ্যাস পাওয়া না যায় তবে এই অর্থ দেয়া লাগবে না। ভারতীয় কোম্পানি নিজস্ব খরচে জরিপ এবং খনন করবে। গ্যাস বা তেল পেলে তা বিক্রির টাকা থেকে তারা প্রতি বছর তাদের খরচের ৫৫ শতাংশ নিয়ে নেবে।
গ্যাস পাওয়া গেলে তার উৎপাদনযোগ্য অংশের ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পেট্রোবাংলার থাকবে। আর যদি তেল পাওয়া যায় তার ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ পাবে পেট্রোবাংলা। তবে যতদিন খননসহ সকল খরচ উসুল না হবে ততদিন প্রতিবছর ৫৫ শতাংশ করে খরচের অর্থ আগে নেবে ওএনজিসি।
এই প্রথম সমুদ্রের অংশীদার হতে পেরে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী এনার্জি বাংলাকে বলেন, সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে ওএনজিসির সাথে বাপেক্সও অংশীদার। দ্বিমাত্রিক জরিপ থেকে শুরু করে সকল ধরণের কার্যকলাপে বাপেক্স তদারকি করছে। এতে বাপেক্সের নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এরফলে আমাদের প্রকৌশলীদের ভবিষ্যতে দক্ষতা আরও বাড়বে।
ওএনজিসি এরআগে সাড়ে ৫ হাজার লাইন-কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করেছে। তারই ভিত্তিতে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, গ্যাস আবিষ্কৃত হলে দেশীয় উৎপাদন বাড়বে। এতে ব্যয়বহুল তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) উপর নির্ভরতা কমবে। বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে খনন কাজ এক বছর দেরি হয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, নতুন করে সমুদের তিনটি ব্লকে অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপ্রস্তাব আহ্বান করার উদ্যোগ নেযা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় এখন বিদেশী কোম্পানি আগ্রহি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্ঠদের। সূত্র জানায়, আগামী দুই এক মাসের মধ্যে নতুন দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ চূড়ান্ত করা হবে।
উৎপাদন অংশীদার চুক্তির (পিএসসি) আওতায় ২০১৪ সালে পেট্রোবাংলার সাথে চুক্তি করে ওএনজিসি ও ওভিএল।
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত বছরের মার্চে খনন কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়।
এরআগে ১৯৯৬ সালে অগভীর সমুদ্রের ১৬ নম্বর ব্ল¬কে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্দানের জন্য ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীরে ১১টি। আর স্থলভাগে আগে থেকেই ২২টি ব্লকে ভাগ করা ছিল।
১৯৯৬ সালে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয়। অগভীর সমুদ্রের ৯ নম্বর ব্লকে সে সময় নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে কেয়ার্নস এনার্জি। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হলেও দ্রুত মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।