গ্যাসকূপ খনন: অনুমোদন ছাড়াই গ্যাসপ্রমকে বাড়তি অর্থ

প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই গ্যাসকূপ খনন করতে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া বাড়তি অর্থ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দিল একনেক। রাশিয়ার গ্যাসপ্রমকে এভাবে অর্থ দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ দিতে গ্যাস উত্তোলন সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করে পেট্রোবাংলা। যা মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গ্যাসের চারটি কূপ খনন এবং প্ল্যান্ট স্থাপনে ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয় পেট্রোবাংলা। বিদেশী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সাথে কূপ খননের চুক্তি করা হয়। কিন্তু একটি গ্যাসকূপে পানি ওঠার কারণে চুক্তির অতিরিক্ত অর্থ দাবী করে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য গ্যাজপ্রমকে বাড়তি ১৩৫ কোটি টাকা দেয়ার চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। যার কোন ধরণের প্রশাসনিক অনুমোদন নেয়া হয়নি।  গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রকল্পটির পুরো ব্যয় বহন করা হচ্ছে।

গ্যাস উত্তোলনের জন্য ২০১০ সালে অগমেন্টশন অব গ্যাস প্রোডাকশন আন্ডার ফাস্ট ট্র্যাক প্রোগ্রামের মধ্যে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এর আওতায় চারটি নতুন কূপ খনন করা হয়। এসব কূপ খননের দায়িত্ব পায় রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ কোটি ডলার ব্যয়ে কাজটি দিতে চুক্তি করে জ্বালানি বিভাগ। এর মধ্যে একটি কূপে গ্যাসের সঙ্গে পানি ওঠায় চুক্তির বাড়তি অর্থ দাবী করে গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির দাবীর প্রেক্ষিতে  এক কোটি ৭৪ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয় পেট্রোবাংলা। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পরবর্তীকালে চুক্তিও সংশোধন করা হয়েছে। যার প্রশাসনিক কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে পরিকল্পনা কমিশনের একনেকের সারসংক্ষেপেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বাড়তি অর্থ এবং ঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকল্প ব্যয়  ৫৩৫ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়  পেট্রোবাংলা। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দ্রুত গ্যাস কূপের কাজটি করতে যেয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন নেয়া সম্ভব হয়নি। চাহিদা মেটাতে কূপটি থেকে গ্যাস উত্তোলন প্রয়োজন ছিল। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রকল্পটির বাড়তি অর্থ  ঘটনাত্তোর অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এ কাজটি আরও আগে করলে ভালো হত।

পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, খনন কাজে গাজপ্রোম ইন্টারন্যাশনালের গাফিলতি বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। কূপ খননে ত্রুটির দায় কার তা বের করা হয়নি। কিন্তু ঠিকাদারকে অতিরিক্ত টাকা ঠিকই প্রদান করা হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া কাজটি কিভাবে করা হয়েছে তার ষ্পষ্ট জবাবও দিতে পারেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। শুধু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরণের ঘটনোত্তর অনুমোদন সম্প্রতি কোন প্রকল্পে ঘটেনি।

প্রকল্পের ভূতত্ত্ববিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, রশিদপুরের ২০ নম্বর কূপে পানি এবং গ্যাসের চাপ সমান থাকার কারণে সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমিক পর্যায়ে বিষয়টি ধরা পড়লে পানি বন্ধ করা যেত। এ ধরণের কারিগরি ত্রুটি ভবিষ্যতে না হয় সেজন্য সর্তক থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পের আওতায় ব্যয়ের পাশাপাশি মেয়াদও বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত।  এটি বাস্তবায়ন করছে  বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড(বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।