গ্যাসের চাপ শূন্য অনেক শিল্পে: রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার শঙ্কা 

Oplus_131074

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা (সোমবার, ৫ই মে ২০২৫):

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্যাস সংকট ও শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিটিএলএমইএ।

টেক্সটাইল ও পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারী এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরে চলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে। অধিকাংশ টেক্সটাইল মিল এবং পোশাক কারখানায় গ্যাসের শূন্য চাপের প্রমান রয়েছে। গ্যাস সরবরাহের এই অবস্থা চলতে থাকলে টেক্সটাইল এবং পোশাক খাতের প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। উৎপাদন কার্যক্রম ব্যহত হয়ে রপ্তানি কমে যাবে। ফলে ফরেন রিজার্ভের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানানোর দাবি করা হয়েছে।

‘গ্যাস সংকটে টেক্সটাইল এবং পোশাক শিল্পে উৎপাদন বিপর্যয়: রপ্তানি হ্রাস, আর্থিক সংকট ঘনিভূত, ব্যাংক ঋণ ও বেতনাদি পরিশোধে আশংকা’ শিরোনামে

পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন হুবহু তুলে ধরা হলো:

দেশের শিল্পকারখানা বিশেষ করে টেক্সটাইল মিল এবং পোশাক খাতে হঠাৎ করেই প্যাস সরবরাহে কারখানাগুলোতে মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও প্রকট হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিল্প উদ্যোক্তা এবং রপ্তানিকারকরা। কয়েকদিন ধরে চলা প্রকট গ্যাস সংকটে দেশের রপ্তানিনির্ভর ও স্থানীয় টেক্সটাইল মিল এবং পোশাক খাতের অনেক কারখানায় উৎপাদন আংশিক অথবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসের অভাবে পোশাক কারখানাগুলো উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারায় চলমান কার্যাদেশ অনুযায়ী যথাসময়ে পণ্য সরবরাহের জন্য বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে বিমান পথে অতিরিক্ত খরচে পণ্য সরবরাহ করতে হচ্ছে। এতে উক্ত পোশাক কারখানাগুলোতে বিশাল আংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। টেক্সটাইল মিল এবং পোশাক কারখানাগুলোতে গ্যাসের সংকট দীর্ঘদিনের। গ্যাসের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহের আশ্বাসে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় ৩০০% এর অধিক মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, একই সাথে মিল মালিকদের সিকিউরিটি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়। শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহের নামে মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও বাস্তবে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

বর্তমানে পৃথিবীতে ট্যারিফ যুদ্ধ এবং ভূরাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান অন্য দেশগুলোতে সুবিধাজনক উৎপাদন পরিবেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে স্থানান্তর হচ্ছে। স্থানান্তরের অপেক্ষায় থাকা এই সব শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বালাদেশে স্থাপনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশের বর্তমান গ্যাস সংকট এবং ব্যাংক খাতের আর্থিক সক্ষমতার অভাবে বাংলাদেশ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে।

গত জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে পঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারাবার পত্র প্রেরন, আবেদন এবং নিবেদন করেও গ্যাস সংকটের কোন সমাধান হয়নি ।তথাপিও সম্প্রতি সকল অংশীজনের আপত্তি আমলে বা নিয়ে অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে এর অন্যতম প্রধান কারণ বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন বাড়াতে শিল্পকারখানাগুলোতে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে শুধু তিতাস নেটওয়ার্কেই শিল্পখাতে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট প্যাস সরবরাহ কমেছে। এছাড়াও আমরা মনে করি সিস্টেম লস ২০% এর কাছাকাছি কারণ সকল টেক্সটাইল মিল এবং পোশাক কারণানায় ইভিসি মিটার স্থাপন করা হয়নি। ফলে সিস্টেম লসের প্রকৃত হিসাব বুঝা যাচ্ছে না।

বিটিএমইএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিটিএলএমইএ এর অধীনের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল পোশাক কারখানাগুলোর দেশের রপ্তানিতে প্রায় ৮৫% অবদান। গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করা উচিৎ হলেও তা করা হচ্ছে না বরং রপ্তানি আয়ের মূল উৎসের প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসের অভাবে স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচলনা করতে পারছে না।

অধিকাংশ টেক্সটাইল মিল এবং পোশাক কারখানায় গ্যাসের শূন্য চাপের প্রমান রয়েছে। গ্যাস সরবরাহের এই অবস্থা চলতে থাকলে বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিটিএলএমইএ এর অধীনের টেক্সটাইল ও পোশাক খাতের প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এই সংকট চলতে থাকলে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যহত হয়ে রপ্তানি কমে যাবে। ফলে ফরেন রিজার্ভের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সামষ্টিক অর্থনীতি মেরামতের সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। এতে আর্থিক সংকট ঘনিভূত হবে, ব্যাংক ঋণ এবং শ্রমিকদের বেতনাদি পরিশোধে আশংকা তৈরি হবে মর্মে উৎপাদক এবং রপ্তানিকারকরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নতুন কোন কর্মসংস্থান হচ্ছে না বরং কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধে অনিশ্চয়তার আশংকা রয়েছে।

কিন্তু গ্যাসের এই মারাত্মক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিশেষ করে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিইআরসি পেট্রোবাংলা এবং তিতাসের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরণের পরিকল্পনা কিংবা রূপরেখা প্রদান করা হয়নি। এমতাবস্থায় সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় অতিসত্বর যে কোন মূল্যে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করে টেক্সটাইল এবং পোশাক খাতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে সিস্টেম লস বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, বিইআরসি, পেট্রোবাংলা, তিতাসসহ গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে মুনাফা অর্জন পরিহার করা এবং গ্যাস সরবরাহের সকল পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা।